ঢাকা কলেজের হলে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় ৬ জনকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আগামী সোমবারের (১৬ অক্টোবর) মধ্যে বহিষ্কৃতদের হল থেকে বের করে দিতে হল কমিটিকে নির্দেশনা দিয়েছে কলেজ প্রশাসন। বুধবার (১১ অক্টোবর) বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউসুফ।
তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে ৬ জনকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আগামী সোমবারের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে হল কমিটিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরণের কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্যও হল কমিটিকে শতর্ক করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বহিষ্কৃতরা হলেন, রাউফুর রহমান সোহেল, এবিএম আলামিন, সজিব আহসান, আবরার হোসাইন সাগর, সৈয়দ আব্দুল্লাহ শুভ, ফাহমিদ হাসান পলাশ।
জানা যায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার ঢাকা কলেজের শহীদ ফরহাদ ছাত্রাবাসের গেস্টরুমে ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও ডেইলি বাংলাদেশের কলেজ প্রতিনিধি ফয়সাল আহমেদকে মারধর করে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কিছু কর্মী। এ নিয়ে অনলাইন মাধ্যমসহ জাতীয় গণমাধ্যমে নিউজ হলে পরদিন বৃহস্পতিবার রাত ১২ টা থেকে ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক ও বাংলাট্রিবিউনের কলেজ প্রতিনিধি ওবাইদুর সাঈদকে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। পরে রাউফুর রহমান সোহেলের নেতৃত্বে সোহাগ সরকার, চমক ও সাব্বিরসহ আরো অনেকে তার ফোন কেড়ে নেয়। পরদিন শুক্রবার সোহেল ওবাইদুর সাঈদকে শারীরিক ও অমানসিক নির্যাতন চালায়। ফোন কেড়ে নেয়ার পর সাংবাদিকদের সাথে কথোপকথন, ব্যক্তিগত বিষয় স্ক্রিনশট ও ভিডিও করে নেয়। বিকাশে থাকা ৩৭০০ টাকাও হাতিয়ে নেয় সোহেল।
এ ঘটনায় জাতীয় গণমাধ্যম ও অনলাইনে নিউজ হয়। বিভিন্ন সাংবাদিক সমিতি বিবৃতি দেয়। মুক্ত সাংবাদিকতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে রাউফুর রহমান সোহেলসহ ৬ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
পরে তড়িঘড়ি করে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এ, কে এম ইলিয়াসকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে ঢাকা কলেজ প্রশাসন। সেই অফিস অধ্যাদেশে ৪ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা না দিয়ে ফের ৯ অক্টোবর (সোমবার) পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নেয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু বর্ধিত সময়েও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি তদন্ত কমিটি। একদিন পর মঙ্গলবার কলেজ প্রশাসনকে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করে তদন্ত কমিটি। পরবর্তীতে বুধবার তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ঢাকা কলেজ কতৃপক্ষ অভিযুক্ত ৬ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কার করেন। এছাড়াও আগামী সোমবার (১৬ অক্টোবরের) মধ্যে বহিষ্কৃতদের হল থেকে বের করে দিতে হল কমিটিকে নির্দেশনা দিয়েছে কলেজ প্রশাসন।
যদিও সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে দোষিদের ছাত্রত্ব বাতিল করার দাবি তোলা হয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এ জেড ভূঁইয়া আনাস বলেন, আমরা কলেজ প্রশাসনকে নির্যাতনকারীদের ছাত্রত্ব বাতিল, স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ সৃষ্টি ও হলে গেস্টরুম কালচার বন্ধের দাবি জানিয়েছিলাম। প্রশাসন তাদেরকে হল থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা ভালো দিক। তবে আমরা এখনো দোষীদের ছাত্রত্ব বাতিল, সাংবাদিকতার পরিবেশ সৃষ্টি ও গেস্টরুম কালচার বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে কলেজের পদক্ষেপ জানতে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করব।
উল্লেখ্য, রাউফুর রহমান সোহেলের ছাত্রত্ব দীর্ঘদিন আগে শেষ হলেও অবৈধভাবে হলে অবস্থান করছে বলে জানা যায়।