চট্টগ্রামের আলোচিত মিত্যু হত্যা মামলায় মিথ্যা ও অসত্য তথ্য সরবরাহ করা এবং সেসব প্রচারের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের সম্পত্তি ক্রোক করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জুলফিকার হায়াত এ আদেশ দিয়েছেন। আদেশের সঙ্গে সাংবাদিক ইলিয়াসের সম্পত্তি ক্রোক সংক্রান্ত সব প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী মো. জুয়েল মিয়া নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি।
এর আগে গত ২৫ জুলাই মামলার চার্জশিট গ্রহণ করে সাংবাদিক ইলিয়াসের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন একই আদালত। একইসঙ্গে তাকে গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৩১ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়।
একই দিন মামলার অভিযোগ থেকে নিহত মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আকতার ও তার বাবা মো. আবদুল ওয়াদুদ মিয়াকে অব্যাহতি দেন আদালত। অন্যদিকে সাংবাদিক ইলিয়াস এবং বাবুল আকতারের ভাই মো. হাবিবুর রহমান লাবুর বিরুদ্ধে দেয়া পুলিশের চার্জশিট গ্রহণ করেন আদালত।
এরও আগে গত ৯ এপ্রিল বাবুল আকতার ও সাংবাদিক ইলিয়াসসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. রবিউল ইসলাম চার্জশিট দাখিল করেন আদালতে। চার্জশিটে থাকা অন্য দুই আসামি হলেন বাবুল আকতারের ভাই মো. হাবিবুর রহমান লাবু ও বাবা মো. আবদুল ওয়াদুদ মিয়া। কিন্তু আসামিদের মধ্যে সাংবাদিক ইলিয়াস পলাতক থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
এরপর গত ১১ মে মামলাটির বিচার কার্যক্রমের জন্য ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশেক ইমামের আদালত।
এর আগে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। মামলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগ করা হয়।
মামলার এজাহারে পিবিআই প্রধান অভিযোগ করেন, আমার নেতৃত্বাধীন তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ে চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলা তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় তদন্তে আসামি হিসেবে সাবেক এসপি বাবুল আকতারের নাম উঠে আসে। তদন্তের সময় গ্রেফতার করা হয় তাকে। জেলহাজতে থাকা বাবুল আকতার ও বিদেশে অবস্থান করা সাংবাদিক ইলিয়াসসহ অন্য আসামিরা মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য ও পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়।
সেই ধারাবাহিকতায় বাবুল আকতার ও অন্য আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় সাংবাদিক ইলিয়াস ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আইডির মাধ্যমে ‘স্ত্রী খুন স্বামী জেলে, খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করে। যেটির ব্যাপারে ৪ সেপ্টেম্বর অবগত হই আমি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভিডিওতে বিভিন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের মাধ্যমে তদন্তাধীন মিতু হত্যা মামলার তদন্তকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধসহ তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইলিয়াস হোসাইনের ভিডিওতে প্রচারিত বক্তব্যে দেশের ভাবমূর্তি এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উসকানি দেওয়া হয়। এছাড়া ভিডিওতে পুলিশ এবং পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআই ও বিশেষ করে আমার মান-সম্মান ও সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হয়েছে। যার জন্য দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এর নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে।
পিবিআই প্রধান এজাহারে আরও উল্লেখ করেন, ভিডিওতে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস করা হয়। রাষ্ট্রে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা-বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিরও অপপ্রয়াস করেছে। এছাড়া এজাহারে ওই ভিডিও ডকুমেন্টারির বিভিন্ন তথ্য ও বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করে নানা প্রমাণ ও তথ্য উপস্থাপন করেন বনজ কুমার।