আজ ২০ অক্টোবর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর ৮ম জাতীয় সংসদের ১৮ তম অধিবেশনে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন–২০০৫’ সংসদে উত্থাপিত হয় এবং একই বছর ২০ অক্টোবর সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করে। তখন থেকেই ২০ অক্টোবরকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির বয়স ১৯ হলেও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর যাত্রা শত বছরের পুরোনো। ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা ‘ব্রাহ্ম স্কুল’ নামে যাত্রা শুরু করে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে নাম বদলে বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন। ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজে ও ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম শ্রেণির কলেজের রূপ পায়। এরপর নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৩৮ টি বিভাগ ও ২টি ইন্সটিটিউট চালু রয়েছে যেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭ হাজারের বেশি, বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ৭০০ জন।
‘বিপ্লবে বলীয়ান, নির্ভীক জবিয়ান, প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের বিশ্ববিদ্যালয় উদযাপন করতে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন আন্দলন-সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা এ প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০ বছরের এ যাত্রায় প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্খা ও ভাবনার কথা জেনেছেন দৈনিক আমাদের বার্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আসাদুল ইসলাম।
সংকট কাটিয়ে প্রস্ফুটিত হোক সগৌরবে
আইমুন আক্তার ছবি, রসায়ন বিভাগ
শত সীমাবদ্ধতা নিয়ে পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায় দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন হতে শুরু করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুতেই জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীদের অবদান ছিলো অনস্বীকার্য। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। উনিশ পেরিয়ে বিশে পদার্পণ করলেও, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যা অর্জন তা ঈর্ষণীয়। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর নানা স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষার স্থান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও, প্রকৃতপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা আবাসন সুবিধা, সুন্দর প্রশস্ত ক্যাম্পাস, আধুনিক গবেষণাগার সংকটে রয়েছে। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আবাসন, গবেষণায় পর্যাপ্ত সুবিধা দিয়ে থাকে, সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে বছরের পর বছর। বিভিন্ন সংকট মোকাবিলা করে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যায়টি নানা অপূর্ণতার মাধ্যমে সম্পূর্ণ করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আমার চাওয়া, আমার প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়টি এই সমস্ত সংকট কাটিয়ে উঠে, সগৌরবে তার ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে বছরের পর বছর।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস অনেকটা নিজের জন্মদিনের মত
নাঈমুর রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস অনেকটা নিজের জন্মদিনের মত। আমরা যেমন জন্মদিনে নানা উল্লাসের মাঝেও নিজের জীবন থেকে হারানো সময়গুলো মূল্যায়ন করি, একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আসলেও আমরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দিনগুলোর প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসাব মিলাতে বসি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রতিটি দিনের একেকটি আলাদা গল্প আছে। আজকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায়ের ১৯ বছর পূ্র্ণ হলো এটি যেমন আনন্দের তেমনি কষ্টের কারণ হলো এতদিনেও আমার প্রাণের ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। তারপরেও নিজেকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছোট্ট ক্যাম্পাস। ১৮ বছর থেকে ১৯ এ পদার্পণ করেছে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গৌরবের। আমরা চাই সকল প্রাপ্তি - অপ্রাপ্তিকে পাশ কাটিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছে যাক সাফল্যের চূড়ায়।
ছোট্ট ক্যাম্পাস একটা সুন্দর গ্রামের মতন
তাসমিম তাবাসসুম, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে আমার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যাত্রা শুরু। দেখতে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা প্রায় শেষের দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্রী হিসেবে শেষবারের মতো উদযাপন করবো এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। অন্যদের জন্য তা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হলেও আমাদের জন্য তা এক আবেগ ভরা উৎসব। ক্যাম্পাস জীবনে প্রায়শই শুনতে হয়েছে আমাদের ক্যাম্পাস নেই কিংবা ছোট ক্যাম্পাস। কিন্ত ক্যাম্পাস ছোট হওয়ার একটা দারুন সুবিধাভোগীও আমরা। এই ছোট্ট ক্যাম্পাস আমাদের কাছে বাংলা কবিতার একটা গ্রামের মতন। যে গ্রামে সবাই সকলকে চেনে, সবার সঙ্গে সবার নিয়মিত দেখা হয়। উৎসবে-আনন্দ গ্রামের সবাই মিলে যেমন উদযাপন করে আমরাও বিশ্ববিদ্যালয় দিবসটি সেভাবেই উদযাপন করি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পথচলা চলতে থাকুক হাজার বছর। সকল সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতিতে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বুকে জায়গা করে নিক আমাদের প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়।
দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত শেষ হোক
মো: মাসুদ আহম্মদ সানি, আইন বিভাগ
বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান উৎপাদনের কেন্দ্র। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে অনেক আশা, প্রত্যাশা নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয় এবার ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে। সুযোগ-সুবিধার স্বল্পতা থাকলেও এখানকার শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষামূলক কাজে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু আমার কাছেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে এই প্রতিষ্ঠান একটি ভালোবাসা ও আবেগের জায়গা। কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত শেষ করে সব সংকট ও সমস্যার অবসান ঘটিয়ে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাক আমাদের প্রাণের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রত্যেক জবিয়ানের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক আস্থা, ভালোবাসা ও নিরাপদের জায়গা।
নতুন জন্মদিনে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতাকে স্থায়ীভাবে কাটিয়ে উঠুক
সুরাইয়া, নৃবিজ্ঞান বিভাগ
একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে জ্ঞানের পাল্লাটা ভারি করা, অন্যদিকে মাস বছর ঘুরতেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজেদের চাওয়া পাওয়ার হিসেব নিকেশও কষতে থাকি। বছর যায় প্রত্যাশাও যেনো বাড়তে থাকে। বিচিত্র প্রচ্ছদে ঘেরা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের নিজেদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য সাহস ও উৎসাহ দেয়। যোগাযোগে আবদ্ধ হয়ে প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্র ও কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য প্রস্তত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ের যুদ্ধক্ষেত্রও বলা চলে বিশ্ববিদ্যালয়কে। তবে এতদসত্ত্বেও নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের সঙ্গে নানা বিধ সুযোগ সুবিধা নয় বরং শিক্ষার্থীদের অধিকার যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ, বিভাগভিত্তিক কাঠামোগত উন্নয়ন, আবাসনের সুব্যবস্থা ও ক্যাফেটেরিয়ার খাবার সরবরাহের সুব্যবস্থার যোজন যোজন সম্পর্ক। এসকল কিছুই শিক্ষার্থীর জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। সর্বোপরি নতুন বছরে পদার্পণের সঙ্গে এসব বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা আর দীর্ঘস্থায়ী না করে স্থায়ীভাবে কাটিয়ে উঠবে বলে আশা করছি।
আধুনিক ও যুগোপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক
তাসনিফ জাহান সাজিদ, মার্কেটিং বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১৯ হলেও প্রকৃতপক্ষে এই প্রতিষ্ঠানটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হলে একে ঘিরে সকালের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী হয়ে দাড়ায়। সেই সীমাহীন প্রত্যাশা নিয়ে চলা প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯টি বসন্ত পার করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের প্রত্যাশার স্থান বহুলাংশে পূরণ করে দম্ভের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে সকল ক্ষেত্রে অবদান রেখে। প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র তার শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে সীমাবদ্ধ না থেকে দেশের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। অদ্ভুত মায়ায় আবদ্ধ রাখা এই ক্যাম্পাস আমাদের স্বপ্নপূরণের কারিগর। নতুন দিনে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে শিক্ষার্থীবান্ধব হয়ে তাদের সংকট নিরসনে কাজ করে যাবে। একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের অবস্থানের জানান দেবে।