সাবেক ধর্মমন্ত্রী ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান (৮১) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গত বছর একুশে পদক পান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম এই নেতা।
রোববার (২৭ আগস্ট) রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ময়মনসিংহের নেক্সাস কার্ডিয়াক হাসপাতালে মারা যান তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে এ রাজনৈতিকের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে। তারা বলেছে, সাবেক মন্ত্রীর ছেলে ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন।
এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মী, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ হাসপাতালের সামনে ভিড় জমায়। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
অধ্যক্ষ মতিউর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক ও সফল সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঢালু যুব শিবিরের ইনচার্জ ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরে তার নেতৃত্বে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং পাকিস্তানী বাহিনীর বিরম্নদ্ধ তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। তার নেতৃত্বে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ হানাদার মুক্ত হয়।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ ১৯৪২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবদুর রেজ্জাক এবং মায়ের নাম মেহেরুন্নেসা খাতুন।
অধ্যক্ষ মতিউর রহমান আকুয়া মডেল প্রাইমারি স্কুল থেকে ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেন। এরপর তিনি নকলা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি সম্পন্ন করেন। নবম ও দশম শ্রেণি পর্যন্ত ময়মনসিংহের মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে পড়াশুনা করেন এবং ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে মেট্রিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
এরপর ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এ সময় তিনি গফরগাঁও থানার পাঁচবাগ উচ্চ বিদ্যালয় এবং মনোহরদি হাতিরদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বি এস সি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে এম.এস.সি. সম্পন্ন করেন। এম এস সি পাশের পর তিনি জামালপুর জেলার নান্দিনা কলেজ এবং ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। তিনি স্বল্পকালীন সময়ের জন্য ময়মনসিংহ কলেজেও শিক্ষকতা করেন।