স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর তার কোনো কোনো দোসরের দুর্নীতি এখন দেশ ছেড়ে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত। সম্প্রতি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভূমিমন্ত্রী লন্ডনে গেলে তার পছন্দের স্যুট কিনতে দু–তিন হাজার পাউন্ড ব্যয় করেন। যার মডেল সুপার ২০০, সুপার ১৮০। সুপার ২০০–এর দাম ছয় হাজার পাউন্ড। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯ লাখ ৫৪ হাজার ১৮০ টাকা। এই স্যুট তিনি কেনালি বন্ড স্ট্রিটে গিয়ে কেনেন। কেনার পরেই এগুলো বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ব্রিটেন ছাড়াও নিজের রিয়েল স্টেট ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করেছেন দুবাই, নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায়।
কাতারভিত্তিক এই সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বছর বিনিয়োগকারীর ছদ্মবেশে তাদের সাংবাদিক সাইফুজ্জামানের ১৪ মিলিয়ন ডলারের বাড়িতে যায়। ওই সময় ‘ছদ্মবেশী’ সাংবাদিকদের সাইফুজ্জামান বড়াই করে জানান, তিনি কুমিরের চামড়ার তৈরি জুতার ওপর হাজার হাজার ডলার খরচ করেন এবং লন্ডনের সবচেয়ে দামি দোকান থেকে ইতালিয়ান স্যুট তৈরি করে পরেন। এ ছাড়া ওই সময় লন্ডনের নিজের বাড়িও ঘুরিয়ে দেখান তিনি। যেটিতে রয়েছে সিনেমা হল, জিম, ব্যক্তিগত এলিভেটর এবং নতুন রোলস রয়েলস গাড়ি রাখার নিরাপদ আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং এরিয়া।
‘দ্য মিনিস্টারস মিলিয়ন্স’ শিরোনামে আলজাজিরার ওই প্রতিবেদন আরও বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ ভালো সখ্যতা ছিল সাইফুজ্জামানের। যা তিনি নিজেই স্বীকার করে বলেছেন, ‘আমার বাবা শেখ হাসিনার খুব কাছের লোক ছিলেন। আমিও তার কাছের লোক… শেখ হাসিনা আমার বস… তিনি জানেন যুক্তরাজ্যে আমার ব্যবসা আছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৭ সালের দিকে সম্পত্তি কেনা বাড়িয়ে দেন। ২০১৯ সালে যখন তিনি মন্ত্রী হন, তখন এটি আরও বাড়ে।’
সাইফুজ্জামান আলজাজিরার কাছে দাবি করেছেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব আমিরাতে নিজের বৈধ ব্যবসার মাধ্যমে এই সম্পদ কিনেছেন তিনি। তবে, অন্তর্বর্তী সরকার তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ এবং তার পরিবারের মালিকানাধীন ইউসিবিএল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এ ছাড়া ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে যান, তখন সাইফুজ্জামানও দেশ ছেড়ে চলে যান।