ফরিদপুরের সালথা উপজেলার পশ্চিম বিভাগদি আব্বাসিয়া দাখিল মাদরাসার সাবেক সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম ও মাদরাসার সাবেক সুপার মো. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেছেন মাদরাসার বর্তমান সুপার আবু নাছের আহমদ ও অন্যান্য শিক্ষকরা।
অভিযুক্ত মাদরাসার সাবেক সুপার মো. মাহফুজুর রহমান পাশের নগরকান্দা উপজেলার গোয়ালদি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মে মাদরাসার সুপার হিসেবে যোগদান করেন। মাহফুজুর রহমান বর্তমানে কমলেশ্বদী শাহরুল লাইলা আলিম মাদরাসায় প্রিন্সিপাল হিসাবে কর্মরত আছেন। মাদরাসার সাবেক সভাপতি পশ্চিম বিভাগদী এলাকার আলতাফ শেখের ছেলে এবং একটা জাতীয় দৈনিকের সালথা উপজেলা প্রতিনিধি এবং অপর একাট পত্রিকার নগরকান্দা-সালথা প্রতিনিধি এবং বিভাগদি শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাদরাসার সাবেক সুপার অন্যত্র চাকরি হওয়ায় গত ৩১ মার্চ নতুন সুপার দায়িত্ব নেন। দায়িত্বরত অবস্থায় মাদরাসার কাজে অগ্রণী ব্যাংক নগরকান্দা শাখা ও সোনালী ব্যাংক সালথা বাজার শাখায় টাকা তুলতে গেলে দেখতে পান মাদরাসার হিসাবে কোনো টাকা নেই। সাবেক সভাপতি মো. সাইফুল ইসলামের যোগসাজেশে সাবেক সুপার মাহফুজুর রহমান বিভিন্ন সময়ে ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা তুলে নেয়। যা মাদারসার আয়-ব্যয়ের খাতায় তোলা হয়নি।
মাদরাসার সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম। তিনি সভাপতি নির্বাচিত হলে মাদরাসার উন্নয়নে ৪ লাখ টাকা অনুদান দেবেন বলে সব শিক্ষকদের জানান। পরবর্তীতে চেক হারিয়ে গেছে বলে সবাইকে জানান। পরে চেক পাওয়া গেলে সেই চেক জমা দিলে দেখা যায়, ব্যাংক হিসেবে কোনো টাকা নেই। তাছাড়া তিনি ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া ৫০ হাজার টাকার মাদরাসায় জমা না দিয়ে উঠিয়ে নেন।
এই বিষয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. আবু নাছের আহমদ বলেন, ব্যাংকের টাকা নয়-ছয়ের ঘটনা সবই সত্য, আমি যেটা পেয়েছি সেটাই বলেছি, তাছাড়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট এ সবই পরিষ্কার রয়েছে। এছাড়াও গত জানুয়ারির ২ তারিখে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে আসা ৫০ হাজার টাকা ব্যাংকে আসে এবং সেদিনই সাবেক সভাপতি টাকাটা তুলে নেয়।
অভিযুক্ত সাবেক সুপার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, আমি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি, এর বিচার আল্লাহ করবেন। আমি যোগদানের আগে এই মাদরাসার অবকাঠামো তেমন কিছুই ছিলো না। বরং আমি যোগদানের পরে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে সুন্দর বড় ঘর দিয়েছিলাম, নিজের পকেটে টাকা খরচ করে প্রতিবছর নবায়ন করেছি। মূল কথা প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে আমার নামে এ ধরনের নানা অপবাদ দেয়া হচ্ছে।
সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, সভাপতি পদে দায়িত্ব নেয়ায় অনেকের জন্যই সমস্যা হয়েছিলো। শিক্ষকদের মধ্যে পাঁচজনের ছিলো ভুয়া সার্টিফিকেট, অফিসে ছিলো না কোনো নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজ। আগে ক্লাস চলতো তখন দুপুর একটা পর্যন্ত আমি সেটাকে বিকেল চারটা পর্যন্ত করি। এজন্য তারা মিথ্যা অভিযোগ তুলছে আমার দিকে। আমি ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ফেব্রুয়ারি সভাপতির দায়িত্ব নিই। তখন ফান্ডে ১১ ‘শ টাকা ছিলো। পেছনের টাকার দায় আমি নেবো কেনো?
তিনি আরো বলেন, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ৫০ হাজার টাকার কথা বলেছে তারা, আমার যোগদানের আগে এখানে কোনোদিন স্পোর্টস হয়নি, তার মধ্যে স্পোর্টস বাবদ ত্রিশ হাজার টাকা বকেয়া পরিশোধ করি, শিক্ষকদের পিকনিকের ১০ হাজার টাকা দেই, ক্রীড়া সামগ্রী বাবদ ৭০০০ টাকা খরচ করেছি। এছাড়াও নিজের পকেট থেকে আরও বিশ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছি মাদরাসার উন্নয়নের জন্য। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আনিসুর রহমান বালী বলেন, শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে তদন্তের জন্য দেয়া হয়েছে, তদন্ত শেষ হলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।