সিন্ডিকেটের দুষ্টচক্র বনাম অন্তর্বর্তী সরকার ও জনগণ - দৈনিকশিক্ষা

সিন্ডিকেটের দুষ্টচক্র বনাম অন্তর্বর্তী সরকার ও জনগণ

মো. আজহারুল ইসলাম, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

যতদুর জানা যায় সিন্ডিকেট শব্দের আভিধানিক অর্থ প্রশাসক বা প্রতিনিধি, যা ফরাসি শব্দ থেকে এসেছে। উইকিপিডিয়া অনুযায়ী সিন্ডিকেট হলো ব্যক্তি, কোম্পানি, করপোরেশন বা সংস্থার একটি স্ব-সংগঠিত গোষ্ঠী, যা কিছু নির্দিষ্ট ব্যবসায় লেনদেন করার জন্য অথবা একটি অংশীদারত্বমূলক স্বার্থ অনুসরণ বা প্রচারের উদ্দেশে গঠিত হয়। বিভিন্ন উৎস ও তথ্য থেকে সিন্ডিকেট শব্দের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুইটা দিক থাকলেও আমাদের আর্থসামাজিক অথবা ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি অথবা রাজনৈতিক ভাবধারা থেকেই দেখা হোক সিন্ডিকেট শব্দটা। এর আভিধানিক ইতিবাচক অর্থ থেকে সরে এসে আমাদের দেশের মানুষের কাছে স্বভাবতই একটা ঘৃন্য শব্দ হিসেবে বিবেচিত। ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট, যা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের উচ্চশিক্ষিত ও সমাদৃত ব্যক্তিবর্গ নিয়ে গঠিত। এ রকম বহু প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, সংঘ ও সমিতি আছে যাদের নিজস্ব ওইরকম সিন্ডিকেট বা নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিবর্গ থাকে। 

এতো ভালো আভিধানিক অর্থ থাকা সত্ত্বেও আমাদের মননে মগজে এখন এই সিন্ডিকেট শব্দটি জনগণের রক্ত চোষা দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান একটি দল বা গোষ্ঠী হিসেবেই চিহ্নিত, যারা রাষ্ট্রের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ঘাতকের খড়গ ব্যবহার করে সদা-সর্বদা আঘাত করে চলেছে। আর ভুক্তভোগী হিসেবে দেশের আপামর জনগণকে আর্থসামাজিক রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে দুর্বল করে নিজেদের অসদুপায়ে আয় ও অসৎ স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত। অথচ তারাও এদেশের নাগরিক যারা ধর্মকর্ম পালন করে। এদের অনেকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অথবা কম গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে অথবা পদের বাইরে থেকে অসদুপায়ে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত হাত বিস্তৃত করে রেখেছে। সিন্ডিকেটের এই দুষ্টচক্র ধর্মীয় মূল্যবোধের তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শুধু নিজেদের আখের গোছাতে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিরা-উপশিরায় যেভাবে জেঁকে বসেছে তা আমাদের এই স্বাধীন দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ চিত্র পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আরো ব্যাপক আকার ধারণ করেছিলো। দুষ্টচক্র সিন্ডিকেটের এই কালো থাবা এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে খুঁজে পাওয়া যাবে না। দ্রব্যমূল্য, বাজার ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তো বর্তমানে কমন এক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় থেকে শুরু করে বিলাসী দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ মজুত বিতরণ ব্যবস্থাপনা তাদের থাবার বাইরে এটা যেনো কল্পনাতীত। অথচ তারাও আমাদের সামাজিক জীব হিসেবে স্বীকৃত, তারাও কোনো পরিবারের সদস্য। তাদেরও বাবা-মা, ভাইবোন, স্ত্রী-স্বামী, সন্তানসন্ততি, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব শুভাকাঙ্ক্ষী আছে। কিন্তু মনুষ্যত্ব নামক বস্তুটি তাদের থেকে আলাদা, তাদের নিকট অনুপস্থিত। ধর্মীয় মূল্যবোধের ধারেকাছেও তাদের আনাগোনা নেই। ন্যায়বোধ থেকে তারা নিজেদের দূরে রেখেছে। মানুষ নামের কলঙ্ক এই দুষ্টচক্র সিন্ডিকেটের পেছনে থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন কিছু রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, যারা সবসময়ই থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওই যে প্রথমেই বলছিলাম সিন্ডিকেটের অদৃশ্যমান একটা অংশ। তবে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ ছাড় দেন, ছেড়ে দেন না। তাই যে যেভাবেই দেখেন না কেনো তাদের বেশির ভাগই শেষে আইনের বেড়াজালে আটকা পড়ে থাকে। শেষ পরিণতিটাও তাদের ভয়াবহ। কোনো এক উছিলায় সমাজে তাদের মুখোশ খুলে যায়, পরিবার পরিজনসহ তাদের কাউকে মহান আল্লাহ আর ছেড়ে দেন না। 

সিন্ডিকেট নেই কোথায়! পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ সিন্ডিকেটের এক সময় রমরমা ব্যবসা, যা হয়তো বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার আসার ফলে ভিসি নিয়োগ সিন্ডিকেট ব্যবসায় ভাটা পরেছে। আবার এটাও শোনা যেতো প্রশাসনে সচিব, ডিসি, এসপি থেকে শুরু করে নিম্ন ধাপ পর্যন্ত নিয়োগ সিন্ডিকেটের কারখানা, যা এখন আর হয়তো নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ফসল ও সুফল হিসেবে দ্বিতীয় স্বাধীন বাংলাদেশে এটা হয়তো স্বীকৃতি পেতে পারে। হাজারো শহীদ ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশ নতুনভাবে চলতে পেরেছে বলেই হয়তো নিয়োগ সিন্ডিকেটের দুষ্টচক্রটি আর তাদের দৌরাত্ম্য দেখাতে পারছে না অথবা দেশছাড়া হয়ে গেছে। 

বিগত পতিত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে এনসিটিবির সিন্ডিকেটসহ আরো দেখা যেতো সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় নিয়োগ সিন্ডিকেট। যদিও তা রাজনীতির ছত্রছায়ায় এখনো টিকে আছে বলেই মনে হয়। আবার রেলের টিকিট সিন্ডিকেটের কথা কেইবা জানতো না! তবে সবচেয়ে বড় ও মারাত্মক হচ্ছে,  নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বাজার সিন্ডিকেট। এই দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই। প্রয়োজনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করে দ্রব্যমূল্যের বাজার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ অন্তর্বর্তী সরকারের একটি সফলতা হতে পারে। 

অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের যে রূপরেখা তা বাস্তবায়ন হলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এর মূলোৎপাটন না হলেও কমে যাবে অনেকাংশে তা অনুমান করা যায়। এক্ষেত্রে দেশপ্রেমিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বসহ প্রশাসনের যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে লাগাতে হবে। একই সঙ্গে জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে ন্যায়বোধে উজ্জীবিত হতে জাতিতে পথ দেখাতে হবে। আর এ সিন্ডিকেটের দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক (ইংরেজি)

জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক বই দেয়া হবে: অর্থ উপদেষ্টা - dainik shiksha জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক বই দেয়া হবে: অর্থ উপদেষ্টা নিম্নমানের কাগজে ছাপা ফরাজী প্রেসের ৩০ হাজার পাঠ্যবই বাতিল - dainik shiksha নিম্নমানের কাগজে ছাপা ফরাজী প্রেসের ৩০ হাজার পাঠ্যবই বাতিল বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার নম্বর কমে ১০০ - dainik shiksha বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার নম্বর কমে ১০০ বিসিএসসহ সরকারি চাকরিতে আবেদন ফি নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha বিসিএসসহ সরকারি চাকরিতে আবেদন ফি নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি সময় বাড়লো এসএসসির ফরম পূরণের - dainik shiksha সময় বাড়লো এসএসসির ফরম পূরণের কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে প্রকৌশল গুচ্ছ ‍টিকিয়ে রাখতে উপাচার্যদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি - dainik shiksha প্রকৌশল গুচ্ছ ‍টিকিয়ে রাখতে উপাচার্যদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের সনদ অনলাইনে সত্যায়ন যেভাবে - dainik shiksha বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের সনদ অনলাইনে সত্যায়ন যেভাবে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0088281631469727