সীতাকুণ্ডে ভবন সঙ্কটে ৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুল ছাড়ছে - দৈনিকশিক্ষা

সীতাকুণ্ডে ভবন সঙ্কটে ৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুল ছাড়ছে

দৈনিক শিক্ষাডটকম, সীতাকুণ্ড |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, সীতাকুণ্ড : সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তর বাঁশবাড়িয়া রহমতের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দরজা নেই, বেড়া নেই, টিনের চালটিও ভেঙে পড়েছে । সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যায় মেঝে। জঙ্গলে ঘেরা পরিবেশ, আছে মশার উপদ্রবও। রাতে হয় কুকুরের আখড়া। এমন ছন্নছাড়া এক পরিবেশে চলছে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান।

চার বছর আগেও বিদ্যালয়টিতে পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ ছিল। পাকা সড়কের পাশে অবস্থিত বিদ্যালয়টিতে তখন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩৫৪ জন। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্প কাম বিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সীতাকুণ্ডে ছয়টি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সেই তালিকায় ওঠে উত্তর বাঁশবাড়িয়ার এ বিদ্যালয়টির নামও। নতুন ভবন নির্মাণ করতে বিদ্যালয়ের মূল স্থাপনাটি ভেঙে অনতিদূরে পুকুর পাড়ে একটি অস্থায়ী বেড়ার ঘর তৈরি করে দেয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন। যা ছিল খুবই নড়বড়ে ও পড়ালেখার অনুপযোগী। এরপর কমতে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা মাত্র ১৪২ জন। চার বছর আগের তুলনায় যা ৬০ শতাংশ কম।

ছবি: সংগৃহীত

কেন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল আলীম বলেন, বিদ্যালয়ের অস্থায়ী স্থাপনাটি এতটাই নাজুক কেবল ঝুলে পড়া টিনের চালটি ছাড়া এর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এমন ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কোন অবিভাবকই তার সন্তানকে রাখতে চাই না। চলতি বছর শিশু শ্রেণিতে মাত্র ১৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। আবার যারা ভর্তি আছে তারাও প্রতিনিয়ত আমাদের বিদ্যালয় ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে ভর্তি হচ্ছে।

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রবিউল আলমের মা নাজমা বেগম দু’দিন আগে এসেছিলেন ছেলেকে এ বিদ্যালয় থেকে ছাড়িয়ে নিতে। তার ভাষ্য, শিশুদের পড়ার কোন পরিবেশ সেখানে নেই। আমিতো দেখে শুনে আমার ছেলের জীবন নষ্ট করতে পারি না।

এদিকে শিক্ষার অনুপযুক্ত পরিবেশ কিংবা অভিভাবকদের ছাত্র-ছাত্রী ছাড়িয়ে নেয়ার দৃশ্য কেবল উত্তর বাঁশবাড়িয়া রহমতের পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়রই নয়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত অন্য ৫টি বিদ্যালয়ের অবস্থাও ভয়াভহ। এস এম পাইলট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার বছর আগে ছাত্র-ছাত্রী ছিল ১০৭৬ জন। বর্তমানে তা ১২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখিত ৬টি বিদ্যালয়ে সে সময় মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৭৭০ জন। বর্তমানে যা ঠেকেছে ৯৫৬ জনে। অর্থাৎ গত চার বছরে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী কমেছে ১৮১৪ জন বা ৬৫ শতাংশ।

এর মধ্যে এস এম পাইলট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৫১ জন, উত্তর বাঁশবাড়িয়া রহমতের পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২১২ জন, পূর্ব লালানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২২৫ জন, মধ্যেরধারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯০ জন, পশ্চিম বহরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৬ জন ও কেশবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০ জন শিক্ষার্থী কমেছে।

অন্যদিকে কাজ শুরুর ২৪ মাসের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও চার বছর পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের দায়িত্বরত প্রকৌশলী আইয়ুব আলী বলছেন, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ছয়টির মধ্যে ৫টি বিদ্যালয়ের কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। চার বছরে ওই পাঁচ প্রকল্পের ২৫ ভাগ কাজও এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। আবার কাজ চলমান দেখিয়ে পশ্চিম বহরপুর, মধ্যেরধারী ও পূর্ব লালানগর বিদ্যালয়ে নামে মাত্র কাজ করছেন ৪ থেকে ৫ জন শ্রমিক। উত্তর বাঁশবাড়িয়া রহমতের পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ বন্ধই পড়ে আছে।

প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুচ্ছোফা জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রতিবছরই কাজ বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলে। কিন্তু তাদের এই বছর আর শেষ হয় না। অথচ তাদের গাফিলতির কারণে আজ হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা জীবন হুমকির মুখে।

এলজিইডি চট্টগ্রাম জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে ছয় বিদ্যালয়ের কাজ সম্পন্ন হবে। এছাড়া বর্ষা শুরুর আগেই বিদ্যালয়গুলোর অস্থায়ী স্থাপনা মেরামত করে দেয়া হবে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করেছি। একই সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি।

একাদশ-দ্বাদশ বাংলা-ইংরেজির সিলেবাস প্রকাশ - dainik shiksha একাদশ-দ্বাদশ বাংলা-ইংরেজির সিলেবাস প্রকাশ ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঠুঁটো জগন্নাথ অধ্যাপকের পকেটে ৬০ লাখ টাকা - dainik shiksha ঠুঁটো জগন্নাথ অধ্যাপকের পকেটে ৬০ লাখ টাকা সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু - dainik shiksha সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু স্কুলে ভর্তি: সরকারিতে জোয়ার, বেসরকারিতে ভাটা - dainik shiksha স্কুলে ভর্তি: সরকারিতে জোয়ার, বেসরকারিতে ভাটা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবি যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা - dainik shiksha স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবি যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0078158378601074