দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলায় পিবিআইকে পুনঃতদন্তের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আসামিদের উদ্দেশে বিচারক বলেছেন, ‘বাদীকে যদি হুমকি দেওয়া হয়, আপনার (মুশতাক) বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে যেন না দেখানো হয় আপনারা সফল কাপল।’
আজ বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক শওকত আলীর আদালত এ আদেশ দেন।
আজ এ মামলায় নারাজি বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল। শুনানিতে বাদীপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী নারাজি বিষয়ে শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘আসামি মুশতাক আহমেদ বাদীকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। কাপল হিসেবে তারা সমাজে খারাপ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করছে। সমাজে দেখানোর চেষ্টা করছেন তারা সফল কাপল। যা সমাজে খারাপ ইফেক্ট পড়ছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে খারাপ মনোভাব তৈরি হচ্ছে। আসামি ভিকটিমকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করেছেন। সমাজে যাতে এই ধরনের উদাহরণ সৃষ্টি না তৈরি হয়, সেজন্য আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে আসামিপক্ষের আইনজীবী খোন্দকার হাসান শাহরিয়ার বলেন, ‘বাদীকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে না। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তারা আদালতে হাজির হয়েছেন। আসামিদের স্থায়ী জামিনের আবেদন করছি।’
শুনানি শেষে বিচারক বলেন, ‘মৌখিকভাবে বলা হচ্ছে, এরপর যদি বাদীকে কোনো হুমকি দেওয়া হয়, আপনার (মুশতাক) বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে যেন না দেখানো হয় আপনারা সফল কাপল। সমাজের কেউ যেন এর দ্বারা ইফেক্টেড (প্রভাবিত) না হয়।’
তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘স্যার, আপনার নির্দেশ অনুযায়ী কোনো প্রকার ভিডিয়োবার্তা আসামিরা দেননি, এমনকি টিকটকও করেন না তারা। তখন বিচারক বলেন, টিকটক করলে সমস্যা নেই। সমাজে খারাপ ইফেক্ট পড়ে, এমন ভিডিয়ো না করলে হবে।’
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, গত বছরের ১ আগস্ট মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রীকে প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মুশতাক আহমেদকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়। মামলার অন্য আসামি হলেন ওই কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী। ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বাবা মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীনের আদালতে এ মামলার আবেদন করা হয়। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের আদেশ দেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তার মেয়ে ভুক্তভোগী। সে মতিঝিল আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আসামি মুশতাক বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতেন এবং ভুক্তভোগীকে ক্লাস থেকে প্রিন্সিপালের কক্ষে ডেকে আনতেন। খোঁজ-খবর নেওয়ার নামে আসামি ভুক্তভোগীকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। কিছুদিন পর আসামি মুশতাক ভুক্তভোগীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ভুক্তভোগীকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করেন এবং তাকে ও তার পরিবারকে ঢাকা ছাড়া করবে বলে হুমকি দেন মুশতাক। ভুক্তভোগী এ রকম আচরণের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। অধ্যক্ষ ব্যবস্থা করছি বলে, আসামি মুশতাককে তার রুমে নিয়ে আসেন এবং ভুক্তভোগীকেও ক্লাস থেকে নিয়ে আসেন। পরে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসামিকে সময় ও সঙ্গ দিতে বলেন। এ বিষয়ে বাদী অধ্যক্ষের কাছে প্রতিকার চাইতে গেলে তিনি কোনো সহযোগিতা করেননি, বরং আসামি মুশতাককে অনৈতিক সাহায্য করতে থাকেন। বাদী উপায় না পেয়ে গত ১২ জুন ভুক্তভোগীকে ঠাকুরগাঁওয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গেলে আসামি মুশতাক তার লোকজন দিয়ে ভিকটিমকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এরপর বাদী জানতে পারেন আসামি ভিকটিমকে একেক দিন একেক স্থানে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেছে এবং যৌন নিপীড়ন করেছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে এ সংক্রান্ত অপহরণ মামলার পর আলোচিত রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির সেই ছাত্রী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয় গত ১৬ জুলাই। ঠাকুরগাঁও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই ছাত্রী জানায়, তাকে কেউ অপহরণ ও ধর্ষণ করেনি। ওই দিন আদালত থেকে নিজ জিম্মায় মুক্তি নিয়ে সে মুশতাকের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসে।
এর আগে গত ৪ জুলাই মুশতাক আহমেদ হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। সেখানেও ওই ছাত্রী জানায়, তারা বিয়ে করেছে।