সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নতুন কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। গতকাল নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট মনিরুজ্জামান বিজয়ীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। পরে নবনির্বাচিত সদস্যদের পরিচয় করানোর মাধ্যমে নতুন কমিটির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক এডভোকেট মো. আব্দুন নুর দুলালের কাছে দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়। গত ১৭ই মার্চ বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা ভোটে অংশগ্রহণ না করায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হন। সমিতির সভাপতি পদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত প্যানেলের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির এবং সম্পাদক হিসেবে একই প্যানেলের মো. আব্দুন নুর দুলাল পুনর্নির্বাচিত হন।
এদিকে এজিএমের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীদের হট্টগোল পচা ডিম ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। সুপ্রিম কোর্টে হট্টগোল যেন থামছেই না। আইনজীবী সমিতির ভোট শেষ হয়েছে ১৭ দিন পার হয়েছে। তবে ভোটকে কেন্দ্র করে এখনো উত্তাল সুপ্রিম কোর্ট।
প্রতিদিনই আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা নানা কর্মসূচি পালন করছেন। ঘটছে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতির ঘটনা। দুই পক্ষই নিয়মিত মিছিল করছেন। নানা কুরুচীপূর্ণ স্লোগানে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। এডহক কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি পচা ডিম ছোড়াছুড়ি হয়। এতে পচা ডিমের কুসুমে কয়েকজন আইনজীবীর পোশাক নোংরা হয়। এ ছাড়া দুই পক্ষের হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি স্লোগানে আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল দুপুর ১টা থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে এ হট্টগোল হয়। দুপুরে শতাধিক সরকার সমর্থক আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। তারা সমিতি ভবন এবং নিচতলায় অডিটোরিয়ামের সামনে বিক্ষোভ করেন। অপরদিকে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরাও সমিতি ভবনের নিচতলায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে কয়েকশ’ আইনজীবী বিক্ষোভ করেন। তারা ‘ভোট চোর’ ‘ভোট চোর’ বলে স্লোগান দেন। অপরদিকে সরকার সমর্থক শতাধিক আইনজীবী পাল্টা স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে আদালত অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত থেমে থেমে দুইপক্ষের আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেন। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আজ ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে সকল আইনজীবী অবস্থান নিয়েছে। তারা সুপ্রিম কোর্টে গোলযোগ সৃষ্টি করেছে। এই প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করেছে। এদের বিচার করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে ঘৃণা ছড়াতে হবে এবং প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে। এই অবৈধ ভোট ডাকাতরা সুপ্রিম কোর্টের পবিত্র জায়গায় ঢুকতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এডহক কমিটি হয়েছে, এই কমিটিই সমিতির বৈধ কমিটি। এই কমিটি কাজ করবে। আইনজীবী সবাইকে অনুরোধ করছি এডহক কমিটিকে সহযোগিতা করুন। আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি স্লোগানের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনের সামনে নবগঠিত এডহক কমিটি মতবিনিময় করেন। কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী মহসিন রশিদ বলেন, দুপুর ২টায় আইনজীবীদের সঙ্গে আমাদের মতবিনিময় করার কথা ছিল। কিন্তু তারা চর দখলের মতো চারিদিকে তালা মেরে রেখেছে। তালা মারা থাকায় আমরা মিলনায়তনের সামনেই মতবিনিময় করছি।
মহসিন রশিদ বলেন, আমরা বেলা ১১টায় বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছি। উনাকে আমরা একটি স্মারকলিপি দিয়েছি। সেখানে আমরা বলেছি, এই অনির্বাচিত সভাপতি ও সম্পাদকের সঙ্গে আপনি কোনো সম্পর্ক রাখবেন না। সভাপতি ও সম্পাদক হিসেবে কোনোভাবেই তাদের আপনি গ্রহণ করবেন না। আমরা সুপ্রিম কোর্ট বারের অফিসকেও জানিয়ে দিয়েছি। শুধু আমাদের আদেশই মানবেন। অন্য কোনো আদেশ চলবে না। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। আমার নেতৃত্বে গঠিত সমিতির এডহক কমিটিই সম্পূর্ণ বৈধ। তারা সমিতির ডিগনিটি নষ্ট করেছে। এ সময় এডহক কমিটির সদস্য সচিব শাহ আহমেদ বাদল, কমিটির সিনিয়র সদস্য আলহাজ গিয়াস উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকশ’ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।