সেই চেয়ারম্যানকে ক্ষমা চাইতে বললেন এমপি - দৈনিকশিক্ষা

সেই চেয়ারম্যানকে ক্ষমা চাইতে বললেন এমপি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি |

কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক এম এ মতিন ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ বলে অভিযোগ তুলেছিলেন উলিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু। সে অভিযোগের কড়া জবাব দিয়েছেন এমপি এম এ মতিন। তিনি বলেছেন, আমি ১১ নম্বর সেক্টরে থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টুকে বিএনপির আস্থাভাজন দাবি করে তিনি বলেছেন, এমপির সুনাম নষ্ট  করতে তিনি বিভিন্ন অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। গোলাম হোসেন মন্টুকে ক্ষমা প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছেন এমপি এম এ মতিন। একইসঙ্গে ক্ষমা না চাইলে বা অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ দিতে না পারলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। 

সোমবার দুপুরে উলিপুর বণিক সমিতির হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন। 

সংবাদ সম্মলনের শুরুতে নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি ১৭ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রামে ‘তথাকথিত ষড়যন্ত্রমূলক বানোয়াট’ অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানান। এমপি এম এ মতিন বলেন, আমি ১১নং সেক্টরে থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। গোলাম হোসেন মন্টুর সঙ্গে কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা নেই। কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ভুল, মিথ্যা তথ্য দিয়ে কুড়িগ্রামে নিয়ে গেছেন। সেখানে মাত্র ৬-৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। আর ছিলেন ভাড়াটিয়া মানুষ।

তিনি বলেন, উলিপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমার নাম গেজেটভুক্তিতে আনন্দিত ও সন্তুষ্ট হয়েছেন। গত ২৩ জানুয়ারি আমি ঢাকা থেকে উলিপুরে প্রত্যাবর্তনকালে উলিপুর-রাজারহাট সীমান্তের তেজার মোড়ে ১০০টি মোটরসাইকেল নিয়ে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে আমাকে বরণ করে নেন। যুদ্ধকালীন প্রখ্যাত কমান্ডার সরকার ইসহাক আমার আগমনের খবর পেয়ে লুঙ্গী পড়ে তেজার মোড়ে ছুটে আসেন এবং ফুল দিয়ে আমাকে সম্মানিত করেন। সেদিনই দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের শীর্ষ নেতারা উলিপুর শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে শেখ কামাল আন্তঃস্কুল মাদরাসা অ্যাথলেটিকস্ প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে আসার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানান। তাঁদের আমন্ত্রণ পেয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে আসলে প্রবীণ ও শীর্ষ স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা নেতারা এবং ১৪টি ইউনিয়নের ইউনিয়ন কমান্ডাররা পুষ্পমাল্য দিয়ে আমাকে বরণ করেন। 

তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টুকে রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা কাগজ তৈরি করে আমার এবং আমার পরিবারের প্রতিষ্ঠিত সুনাম ও ভাবমূর্তি বিনষ্টের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা বা ১৫ দিনের মধ্যে তার উল্লেখিত তথ্যের সপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ দিতে হবে। অন্যথায় উপযুক্ত আদালতে তার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, কুড়িগ্রাম-৩ আসনে তিনি (গোলাম হোসেন মন্টু) নৌকার এমপি চান না। আওয়ামী লীগের এমপি হলে তার অবাধ ও একচ্ছত্র লুটপাটে কিছুটা অসুবিধা হয়। তাই গতবারের মত নির্বাচনের সময় পেটের ব্যথার অজুহাতে রংপুর হাসপাতালে ভর্তির নাটক না করে এবার প্রকাশ্যেই এই আসনে নৌকা মার্কার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ও তার সমর্থকরা বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং আক্কাস ডাক্তারের মিশন সফল করার জন্য দলের ভেতরে থেকে সুকৌশলে কাজ করে যাচ্ছেন। তারই ফলশ্রুতিতে দলীয় এমপির সুনাম নষ্ট এবং জনসমক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। গত ৯ম সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থীর বিপক্ষে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় উপজেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা কাগজ তৈরি করে আমাকে বিএনপি বা ছাত্রদল সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ কখনোই আমি বা আমার পরিবার উলিপুরের বিএনপি নেতা মাঈদুল ইসলামের বাসায় যাতায়াত বা যোগাযোগ রাখিনি। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাঈদুল ইসলাম সাহেবের প্রার্থীর বিরুদ্ধে রব সরদারকে প্রার্থী করে বিপুল ভোটে বিজয়ী করা হয়েছিলো। প্রতাপশালী মন্ত্রী মাঈদুল ইসলামকে চ্যালেঞ্জ করে ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে উলিপুর মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিলো। এ কারণে আমার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা করে প্রায় ৩ বছর আমাকে হয়রানি করা হয়েছিলো। বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বিএনপির আস্থাভাজন ব্যক্তি। গত ১১ ফেব্রুয়ারি তার নিজ ইউনিয়ন ধরণীবাড়ীতে তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বিএনপির সর্ববৃহৎ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই দিনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার ছেলে সালমান হাসানকে নদী বিচ্ছিন্ন সাহেবের আলগা ইউনিয়নে শান্তি-সমাবেশের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। তারই ইন্ধনে বিএনপি আওয়ামী লীগের শান্তি-সমাবেশে আক্রমণ করে ৪ জনকে আহত করে। তারা উলিপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষে আহতদের দেখতে হাসপাতালে যাওয়া হয়নি বা কোন বিবৃতিও দেয়া হয়নি।

সংবাদ সম্মলনে উপস্থিত ছিলেন, পৌর মেয়র মামুন সরকার মিঠু, সাবেক উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এমডি ফয়জার রহমান, কোম্পানী সেকেন্ড-ইন-কমান্ড বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউস সামাদ, ধামশ্রেনী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, তবকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান, থেতরাই ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা, ধরনিবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান এরশাদুল হক, দূর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সাঈদসহ অনেকে।

এ বিষয়ে উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এমপি যেসব অভিযোগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি (এমপি) শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। তার পরিবার বিএনপি, তারা কেউ আওয়ামী লীগ করেননি। অপেক্ষা করেন সত্য একদিন প্রকাশ হবেই।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, সংসদ সদস্য এম এ মতিন ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তার পরিবার রাজাকার পরিবার। তার ভাই আব্দুল করিম ছিলেন উলিপুর উপজেলা রাজাকার কমান্ডার। তারা মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতনকারী। তিনি কোনো দিন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063421726226807