প্রায় এক দশক আগে থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন অনুষদের বিভাগগুলোতে সীমিত পরিসরে চালু হয় সেমিস্টার পদ্ধতি। তবে গত বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রায় প্রতিটি বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু তাতে মানিয়ে নিতে পারেননি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। নির্দিষ্ট সময়ে কোর্স সমাপ্তি এবং পরীক্ষা শুরু ও শেষ করতে পারছে না বিভাগগুলো। এমনকি পরীক্ষার ফলও নির্দিষ্ট সময়ে হচ্ছে না। এদিকে প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয় একবার। ফলে কেউ এক সেমিস্টারে অকৃতকার্য হলে তাকে ফের ওই পরীক্ষা দিতে অপেক্ষা করতে হয় পরের ব্যাচের জন্য। এতে প্রায় এক বছর সময় লেগে যায়। যার কারণে ওই শিক্ষার্থীর জীবন থেকে হারিয়ে যায় একটি বছর। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, তড়িঘড়ি করে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করতে গিয়ে এমন জটিলতা দেখা দিয়েছে। অনেক শিক্ষকও সেমিস্টার পদ্ধতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি। দূরদর্শী ভাবনা থেকে এটি চালু করলে শিক্ষার্থীরা বিপদে পড়ত না।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৫৯টি বিভাগ ও ৪টি ইনস্টিটিউটের মধ্যে কোনো বিভাগই তাদের সর্বশেষ সেমিস্টারের ফল নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ করতে পারেনি। গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর ক্লাস শুরু হওয়া ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ফল প্রকাশ করতে পেরেছে ৪৫টি বিভাগ। ছয় থেকে আটটি বিভাগ ফল প্রকাশের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদগুলোর সেমিস্টার পদ্ধতির অধ্যাদেশ অনুযায়ী, পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ফল প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু কোনো বিভাগই দুই মাসের আগে ফল প্রকাশ করতে পারেনি। কিছু বিভাগ ফল প্রকাশ করতে ছয় মাসও পার করে দেয়।
সেমিস্টার পদ্ধতির অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কলা অনুষদের প্রতিটি বিভাগের অভিন্ন নিয়মানুযায়ী, ৪ ক্রেডিট অর্থাৎ ১০০ নম্বরের প্রতি কোর্সের জন্য ক্লাসের সংখ্যা ৬০টি (ক্রেডিট ঘণ্টা)। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ৩ ক্রেডিট অর্থাৎ ১০০ নম্বরের একটা কোর্সের ক্লাস সংখ্যা ৪২টি (ক্রেডিট ঘণ্টা)। তিন-চার মাসের মধ্যে ক্লাস শেষ করতে হবে। ক্লাস শেষের পর দুই সপ্তাহ পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির সময় দিতে হবে এবং এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে।
কিন্তু কোনো বিভাগই এ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে না। অর্থাৎ সেমিস্টার পদ্ধতি হলেও বিভাগগুলোর কার্যক্রম ইয়ারলি (বাৎসরিক) সেমিস্টার পদ্ধতি হলেও বিভাগগুলোর কার্যক্রম ইয়ারলি (বাৎসরিক) পদ্ধতির মতোই থেকে গেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অধিকাংশ বিভাগই ১৫ থেকে ২০টি ক্লাস নিয়েই একটি কোর্স শেষ করে দেয়। ফলে কোর্স আউটলাইনে থাকা অনেক টপিকই বাদ দিয়ে পড়ানো হয় বা স্বল্প সময়ের মধ্যে ভাসা ভাসা জ্ঞানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে শেষ করানো হয় কোর্সগুলো।
বহির্বিশ্ব ও দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু রয়েছে, ওই প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে দুই থেকে তিনবার ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। তবে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যতিক্রম চিত্র।
নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান রাজু বলেন, ‘তড়িঘড়ি করে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করতে গিয়ে আজকের এ জটিলতাগুলো দেখা দিয়েছে। দূরদর্শী ভাবনা থেকে এটি চালু করলে ছাত্রছাত্রীরা বিপদে পড়ত না। এখন এগুলো থেকে উত্তরণ করতে হলে কিছু বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’
উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘অ্যাকাডেমিক কাজগুলো আরও গতিশীলতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে আমরা শিগগিরই কাজ শুরু করব। দীর্ঘদিনের চর্চা থেকে সংস্কারে আসতে কিছুটা সময় লাগছে। ইতিমধ্যে আমরা আইকিউএসির সদস্যদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি।’
শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ড্রপের ফলে অতিরিক্ত সময় নষ্টের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘শুধু আমাদের নিজেদের পক্ষে এ বিষয়টির সমাধান করা সম্ভব নয়। এটা নিয়ে সামগ্রিকভাবে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে চিন্তা করতে হবে।’