রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সেশনজটে আটকা পড়ে দীর্ঘতর হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। শিক্ষকদের উদাসীনতা, শিক্ষক সংকট, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকা সবমিলিয়ে সেশনজট বেড়েই চলেছে। সেশনজট নামক কারেন্টজালে পড়ে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে নষ্ট হচ্ছে বছরের পর বছর। তাই শিক্ষার্থীদের দাবি সেশনজটের অভিশাপ থেকে রেহাই পেতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২টি অনুষদের অধীনে মোট বিভাগ রয়েছে ৬১টি। এর মধ্যে মোটামুটি সেশনজটমুক্ত মাত্র পাঁচটি বিভাগ। বাকি ৫৬টি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রায় তিন বছর শেষে এখনো তৃতীয় বর্ষেই উঠতে পারেননি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সেশনজট তাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায়, এই সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সেশনজটের বিষয়টি স্বীকার করছেন।
বিভাগ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার ঘাটতির পাশাপাশি নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় সৃষ্টি হওয়া শিক্ষক সংকটকেও দায়ী করছেন তারা।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে আগস্ট মাস থেকে। গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে ৩০শে অক্টোবর, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১৩ই নভেম্বর, ফলিত গণিত বিভাগের ১০ই নভেম্বর এবং প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৮ই ডিসেম্বর থেকে। অন্যদিকে, বাকি ৫৬টি বিভাগের অধিকাংশ বিভাগের ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের এখনো দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস চলছে।
কয়েকটি বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে এবং কয়েকটিতে চূড়ান্ত পরীক্ষা শিগগিরই শুরু হবে। এ ছাড়াও এমনও বিভাগ রয়েছে যেখানে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস এখনো শুরু হয়নি। এমন অবস্থায় চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন সেশনজটে ভোগা শিক্ষার্থীরা। সেশনজটে আটকে থাকা অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে দীর্ঘ দেড় বছরের যে সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে, তা কমিয়ে আনার বিষয়ে প্রশাসনের তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। এখনো প্রতিটা সেমিস্টার শেষ করতে ৬ মাস বা তারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু করে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে এসে তৃতীয় সেমিস্টার এক্সাম দিচ্ছি। অর্থাৎ ৩ বছরে শেষ হচ্ছে মাত্র তিন সেমিস্টার। যা আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য একটা অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সেশনজটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-ভিসি অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু বিভাগে সেশনজট আছে, এটা সত্য। একটা সময় ছিল যখন চার বছরের প্রোগ্রাম শেষ হতে সাত-আট বছর লেগে যেতো। সে তুলনায় এখন সেশনজট অনেক কমে গেছে। বর্তমানে পাঁচ বছরের প্রোগ্রাম শেষ হতে আনুমানিক ছয়-সাড়ে ছয় বছর লেগে যায়। সেশনজটের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেশনজট সৃষ্টির অনেকগুলো কারণ আছে। কোভিড-১৯ এর কারণে আমরা অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি। আবার নিয়োগ কার্যক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বর্তমানে কিছুটা শিক্ষক সংকটও রয়েছে। আমরা প্রশাসনিকভাবে সেশনজট কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তবে রাতারাতি এটাকে জিরো লেভেলে আনা সম্ভব না। পাঁচটি বিভাগ অন্য বিভাগের তুলনায় সেশনজটমুক্ত কীভাবে?- জানতে চাইলে অধ্যাপক হুমায়ুন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায়, সেটার প্রভাবও কিছুটা রয়েছে এখানে। যে বিভাগগুলো এগিয়ে গেছে তাদের হয়তো চেষ্টা ও আন্তরিকতা ছিল বা তাদের অন্য জটিলতা নেই। আর অন্য বিভাগগুলো পিছিয়ে পড়ার পেছনে শিক্ষক স্বল্পতাও একটা কারণ হতে পারে।