দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি: ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রবেশের প্রতিবাদ ও ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। আন্দোলনের অংশ হিসেবে সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটির আগে ও পরে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থী। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাকি সব টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমন অবস্থায় দীর্ঘ সেশনজটের কবলে পড়তে পারে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানটি।
আলোচনার ভিত্তিতে পরে এই পরীক্ষাগুলো নেওয়ার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হবে বলছে প্রশাসন । তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত না এলে ক্লাস-পরীক্ষায় তারা ফিরবেন না তারা।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে বুয়েটের এক আবাসিক হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে নিষিদ্ধ হয় ছাত্ররাজনীতি। এরপর থেকে গত সাড়ে চার বছর এখানে সব সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল। এর মধ্যেই গত মাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদকসহ একদল নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে পরদিন নতুন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বি এ ঘটনার জন্য দায়ী। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাব্বির সিট বাতিল করলে বুয়েটে ফের ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর দাবিতে সমাবেশ আয়োজন ও এরপর প্রকাশ্যে নেতাকর্মী নিয়ে গত ৩১ মার্চ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ছাত্রলীগ। এর পরদিন ছাত্র রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী রাব্বির হাইকোর্টে করা রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞার রাজনীতি আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
অন্যদিকে গত ৩১ মার্চ থেকে চলতি মাসের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাজনিত কারণে অবস্থান বা বিক্ষোভের মতো কোনো কর্মসূচি গ্রহণ না করলেও নিজেদের দাবিতে অনড় থেকে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিলেন। বিশেষ করে, গত ৩০ ও ৩১ মার্চ ২০তম ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় দুজন ছাড়া আর কেউ অংশ নেননি। এ ছাড়া গত ৩ এপ্রিল ১৮তম ব্যাচের পরীক্ষায়ও কেউ অংশ নেননি। এরপর ঈদুল ফিতর ও নববর্ষের ছুটি শেষে গত ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ১৮তম ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় কেউ অংশ নেননি এবং ২১তম ব্যাচের পরীক্ষায় ১ হাজার ২৭৯ জনের মধ্যে অংশ নিয়েছেন মাত্র ৮ জন। গত ১৮ এপ্রিল ১৯ ও ২২তম ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায়ও কেউ অংশ নেননি। সবশেষ ২০ এপ্রিল ২০তম ব্যাচের পরীক্ষায় ১ হাজার ২১৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ২১৩ জনই (৯৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ) অনুপস্থিত ছিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে এদিনই সন্ধ্যায় এক সভায় পূর্বনির্ধারিত বাকি টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাগুলো স্থগিত ঘোষণা করে বুয়েট প্রশাসন।
এ বিষয়ে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের (ডিএসডব্লিউ) নতুন পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক জানান, শিক্ষার্থীরা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সামনে যে পরীক্ষাগুলো হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো স্থগিত করা হয়েছে। তবে বর্জন করা ও স্থগিত হওয়া পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্র রাজনীতিমুক্ত সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজমান হওয়ার লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একাডেমিক সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকব এবং আগের জরুরি নোটিশ বলবৎ রেখে সুষ্ঠু ও সুন্দর ক্যাম্পাসের নিশ্চয়তা পেলেই একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরব। আমরা মনে করি, আমাদের একতা ও মনোবল আমাদের ক্যাম্পাসকে আগের মতো সুন্দররূপে ফিরিয়ে দেবে।
বুয়েটের ডিএসডব্লিউ অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক বলেন, ‘এ মুহূর্তে বুয়েটে শিক্ষার্থীদের আপাতত কোনো ক্লাস নেই। কারণ এখন পরীক্ষার সময়। পরীক্ষা স্থগিত থাকায় নতুন পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করার জন্য প্রত্যেক বিভাগীয় প্রধানরা ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, কবে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। আর শিক্ষার্থীদের সম্ভাব্য সেশনজট নিরসনেও বিভাগীয় প্রধানরা কাজ করে যাচ্ছেন।’
ছাত্ররাজনীতি আবার চালু হওয়া বা না হওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির বিষয়টা যেহেতু আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে গেছে, সেহেতু হাইকোর্টের লিখিত আদেশ পাওয়া গেলে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হবে।’
সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদারকে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।