গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাইয়াগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও চাঁদপুর আরেফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সেতু নির্মাণকাজের সামগ্রী রাখা হয়েছে। এতে স্কুলে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রশাসন বলছে, খেলার মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখার কোনো সুযোগ নেই।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। তখন থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্কুলমাঠটি ব্যবহার করছে। তারা রড, পাথর, বালু, বুলডোজারসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী মাঠে ফেলে রেখেছে। পুরো মাঠে ছড়িয়ে গেছে পাথর। মাঠের মধ্য দিয়ে হাঁটাচলা করা যায় না। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না। দীর্ঘদিন থেকে এসব সামগ্রী এভাবে পড়ে থাকলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কেউ এগুলো সরানোর উদ্যোগ নেয়নি।
জানা গেছে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাইয়াগঞ্জ এলাকায় করতোয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। রংপুর বিভাগ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এটি বাস্তবায়ন করছে। জামালপুরের সরদারপাড়ার ‘মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজের শুরু থেকেই ইট, বালু-পাথর, বিটুমিনের ড্রাম এবং বুলডোজার স্কুলমাঠে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। অসুবিধার কারণে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লোকজন দিয়ে কিছু বিটুমিনের খালি ড্রাম স্কুলের অন্য জায়গায় সরিয়ে রাখেন।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের এই বিদ্যালয় দুটির অবস্থান গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে চাঁদপুর আরেফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাইয়াগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। দুই বিদ্যালয়ে চার শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। গত শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যালয় দুটির খেলার মাঠের তিন জায়গায় কংকর, পাথর ও পিলার। ঢিবি করে পাথর রাখা হয়েছে। একপাশে বালু অন্যপাশে বুলডোজার। ছোট পাথর ও খোয়া ছড়িয়ে পড়েছে মাঠে। বিদ্যালয়ের কক্ষে যাওয়ার জন্য রাখা হয়েছে সামান্য একটু রাস্তা। মাঠে ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষত ফুটবল খেলা বন্ধ। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ের বারান্দায় থাকছেন। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। প্রায় এক বছর আগে থেকে বিদ্যালয়ের মাঠে সেতু নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়। চাঁদপুর আরেফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আকমল হোসেন ও কাইয়াগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রুবেল হোসেন বলেন, প্রথম থেকেই সেতু নির্মাণের সামগ্রী স্কুলমাঠে রাখতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের কথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেউ শোনেননি।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা মোকাব্বর হোসেন জানান, সেতুর নির্মাণকাজ অর্ধেক হয়েছে। তবে স্কুলমাঠ থেকে খুব শিগগিরই নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে ফেলা হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, কিছুদিন আগে তিনি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেছেন। তবে বিষয়টি জানার পর ঠিকাদারকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওই সব নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যেই তারা মালামাল সরিয়ে নেবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ বন্ধ করে নির্মাণসামগ্রী রাখার কোনো সুযোগ নেই। বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে দ্রুত পাথর, বালুসহ সব মালামাল সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।