বরগুনার পাথরঘাটায় বিদ্যালয়ের আবর্জনা পোড়ানোর আগুনে গুরুতর দগ্ধ হওয়ার ১৪ ঘণ্টা পর মারা গেছেন সেই স্কুলছাত্রী ফারজানা (৯)। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মঙ্গলবার পাথরঘাটা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা টি এম শাহ্ আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত শিক্ষার্থী ফারজানা পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের মো. ফারুক খানের মেজো মেয়ে ও পূর্ব লাকুরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। ফারজানার মৃত্যুতে উপজেলা জুড়ে শোকের মাতম বইছে।
জানা গেছে, শিশুটির মা চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ফারজানা তার বাবার সঙ্গে দাদা বাড়িতে থেকে পাথরঘাটার কালমেঘা ইউনিয়নের পূর্ব লাকুরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলের পরিত্যক্ত ভবনে বিদ্যালয়ের মাঠের একদিকে শুকনো পাতা ও আবর্জনা পোড়ানোর জন্য আগুন ধরানো হয়। শিশুটি সেখানে খেলতে যায়। তখন সে আগুনের কাছে গেলে তার শীতের কাপড়ে আগুন ধরে যায় এবং দগ্ধ হয় শিশু ফারজানা। বিষয়টি দেখে স্থানীয় এক ব্যক্তি ফারজানাকে নিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দেন। পরে তাকে উদ্ধার করে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে য়াওয়া হয়। শিশুটির দেহের ৯০ ভাগ পুড়ে যাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
পূর্ব লাকুরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকা সালমা আক্তার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ফারজানা দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। ওদের ক্লাস ছুটি হয় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। তবে ফারজানা বাড়িতে না গিয়ে স্কুল মাঠে খেলা করছিলো। দ্বিতীয় শিফট ১২টায় শুরু হলে আমরা ক্লাসে চলে যাই। কিছুক্ষণ পর চিৎকার শুনে সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিচে নেমে ফারজানার গায়ে আগুন জ্বলতে দেখি।
পাথরঘাটা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা টি এম শাহ্ আলম জানান, ঘটনার পর থেকেই শিশু শিক্ষার্থীর চিকিৎসা সেবা দিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছেন। বার্ন ইউনিটে আমি ও পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির এসেছি। তবে শিশুর শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় তাকে বাঁচানো যায়নি।
পাথরঘাটা থানার ওসি মোহাম্মদ শাহ আলম হাওলাদার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, শিশু শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।