যশোরের মণিরামপুরের জি এইচ পাড়দিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অর্ধকোটি টাকা মূল্যের জমি নামমাত্র মূল্যে সভাপতির স্ত্রী, শ্যালক, শ্যালিকার কাছে বিক্রির অভিযোগ অবশেষে তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। ২০১৯ ও ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে জমি দলিল করে দেয়া হলেও গত বছরের জুন মাসে জমিতে মার্কেট তৈরি শুরু হলে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নজরে আসে। এ বিষয়ে অভিযোগ দেয়া হলে তা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে। অবশেষে তিনি অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছেন। অভিযোগ তদন্তে আগামী ৮ মে বাদি ও বিবাদি পক্ষকে এ সংক্রান্ত প্রমাণসহ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে হাজির হতে বলা হয়েছে। বুধবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার এ নির্দেশনা দিয়ে বাদি-বিবাদি পক্ষকে চিঠি দিয়েছেন।
সূত্র মতে, জি এইচ পাড়দিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অর্ধকোটি টাকা মূল্যের ৭ শতক জমি নামমাত্র মূল্যে বিদ্যালয়ের সভাপতি কামরুজ্জামান তার স্ত্রী জিনাত রেহেনা, শ্যালিকা হোসনেয়ারা এবং শ্যালক শরিফুল ইসলামের নামে দলিল করে লিখে দেন। মণিরামপুর-রাজগঞ্জ প্রধান সড়কে পাড়দিয়া বাজারে পাড়দিয়া মৌজার ৫৩৯ খতিয়ানে ১২২৭ দাগে জমি পৃথক দুটি দলিলে নেয়া হয়।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ১৯ মে একটি ও ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ মার্চ অপর একটি দলিলের মাধ্যমে জমি লিখে দেয়া হয়। দীর্ঘদিন হলেও এই জমির রহস্য সম্পর্কে জানতেন না এলাকাবাসীসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা। গত বছরে জুনের পর এই জমিতে মার্কেট করতে বহুতল নির্মাণের কাজ শুরু করেন। আন্ডারগ্রাউন্ডসহ দ্বিতল ভবনের ছাদ দেয়ার কাজও শেষ হয়। এসময় টনকনড়ে এলাকাবাসীর। তারা খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন জমি আপাতত বিদ্যালয়ের নেই, এ জমির প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে সভাপতি এক রেজুলেশনের মাধ্যমে দাতার ক্ষমতা নিয়ে স্বজনদের নামে লিখে নিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। ঘুঘুরাইল গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মো. ইউনুচ আলী বাদি হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই সময় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতা সরজমিন গেলে বিষয়টি আমলে নেয়া হয়। এক পর্যায়ে তিনি নির্মাণ কাজ স্থগিত করে দেয়ার মৌখিক আদেশ দেন। তারপর থেকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। এদিকে, বাদি ইউনুচ আলী অভিযোগ করেছেন প্রশাসন সে সময় তাৎক্ষনিকভাবে বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসলেও রহস্যজনক কারণে তা থমকে যায়।
ইউনুচ আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর এ বছরই অবসরে যাচ্ছেন। তাকে এ ঘটনা থেকে রেহাই দিতে দীর্ঘদিন তদন্তের কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। তবে অবশেষে তদন্ত শুরু হয়েছে।
তবে এ অভিযোগ নাকচ করেছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুর গফুর। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বিদ্যালয়ের স্বার্থে না বুঝেই কাজটি করা হয়েছে। তবে এখন কর্তৃপক্ষ যেটাই সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই মেনে নেয়া ছাড়া উপায় কি!
বিদ্যালয়ের সভাপতি কামরুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এতে কিছুই হয় না। খামাকা এলাকার কতিপয় দুই একজন খোঁচাখুঁচি করে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে কামরুজ্জামান আরো বলেন, নির্মাণ কাজে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যা নিয়ে তিনি দুঃশ্চিন্তায় আছেন।
বিদ্যালয়ের জমি বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিদ্যালয়ের নামে দলিলকৃত জমি বিদ্যালয়ের কোনো ব্যক্তিরই বিক্রি করার ইখতিয়ার নেই। অভিযোগের প্রমাণ হলে অবশ্যই কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।