ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় নির্মিত ২০টি দোকান ভাড়ার টাকা স্থানীয় সংসদ-সদস্যের (এমপি) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশনের নামে ৯৯ বছরের দোকান ভাড়ার চুক্তি করে ভাড়ার টাকা ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে নেওয়া দুরভিসন্ধি বলে অনেকেই মনে করছেন। এ ছাড়াও সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে দলীয় কার্যালয়। কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশনের নামে দোকান ভাড়া আদায় করা হয়। নতুন করে জোরপূর্বক সরকারি স্থাপনার দোকান চুক্তি করতে অগ্রীম টাকা প্রদান করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ দোকান মালিকদের।
তবে, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মনিরুল ইসলাম জানান, সরকারি স্কুলের এসব স্থাপনার টাকা স্কুলের ট্রেজারি ফান্ডে জমা হবে। অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ নেই। প্রভাব খাটিয়ে সরকারি স্থাপনার টাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যাওয়ায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সরকারি স্কুলের দোকান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে দোকান মালিক ও সচেতন মহল। ক্রীড়া ফেডারেশনের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয়করণ হয় সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়। জাতীয়করণের আগে স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ম্যানেজিং কমিটির সভায় দোকান ভাড়া কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশনের অধীনে জমা নেওয়া হবে বলে রেজুলেশন করা হয়। এরপর থেকে সরকারি স্কুলের জায়গায় স্থাপিত ২০টি দোকানের ভাড়া ক্রীড়া ফেডারেশনের নামে উঠানো হচ্ছে। কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতি এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। প্রতি মাসে দোকান প্রতি ৪০০ টাকা করে স্কুলকে দেওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। গত ৮ বছরে প্রায় ৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা স্কুলকে প্রদানের কথা ছিল। ছোট-বড় এসব দোকানের ভাড়া ২ হাজার থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়।
সম্প্রতি একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চুক্তিমূল্য ও মাসিক ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সাউথ-বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের একটি হিসাব নম্বরে ভাড়া ও চুক্তিমূল্য পরিশোধ করে ব্যবসায়ীরা। হিসাব নম্বরটির গ্রাহকের নাম অরিন এন্টারপ্রাইজ। অরিন এন্টারপ্রাইজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় অরিন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম তিনি উল্লেখ করেছেন। একাধিক দোকান মালিক জানান, দোকানগুলো স্কুলের অধীনে থাকা অবস্থায় খুবই কম ভাড়া ছিল। কিন্তু ক্রীড়া ফেডারেশনের অধীনে যাওয়ার পর থেকে দোকান ভাড়া অধিক করা হয়েছে। বর্তমানে দোকানগুলো অজিৎ ভট্টাচার্য ও এমপির একান্ত সহকারী আব্দুর রউফ দেখাশোনা করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন তোতা বলেন, স্কুল জাতীয়করণ হওয়ার আগে আনোয়ারুল আজীম আনার এমপি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ম্যানেজিং কমিটির সভায় রেজুলেশন করে বিদ্যালয়ের জমিতে স্থাপিত চারটি ভবনের ছোট-বড় ২০টি দোকান কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশনের নামে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রতি মাসে দোকান প্রতি ৪০০ টাকা স্কুলকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে দিয়েছে ক্রীড়া ফেডারেশন। ২০২২ সালের ২৯ মে এই টাকা দেয়। এক লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই ভবন নির্মাণ করে দলীয় কার্যালয় বানানো হয়েছে। এছাড়াও একটি সংগঠনের কার্যালয় বানিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্কুলের দোকান তারা চুক্তি করতে পারেন না।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য ও ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতি আনোয়ারুল আজীম আনার বলেন, সরকারিকরণের আগেই ক্রীড়া ফেডারেশনের সঙ্গে স্কুলের ৯৯ বছরের চুক্তি হয়। সেই মোতাবেক ভাড়ার একটি অংশ স্কুল পায় আর বাকি অংশ ক্রীড়া ফেডারেশন পায়। তিনি বলেন, ফেডারেশনের সেক্রেটারি ইন্তেকাল করায় ভাড়ার টাকা অ্যাকাউন্টে রাখতে অসুবিধা হচ্ছে। এ কারণে তার অ্যাকাউন্টে টাকা সাময়িকের জন্য রাখা হচ্ছে। নতুন অ্যাকাউন্ট খুললে টাকা সেই অ্যাকাউন্টে চলে যাবে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন ফেডারেশনের মিটিং না হওয়ার কারণে স্কুলের ভাড়ার অংশ দেওয়া যাচ্ছে না।
বিদ্যালয়টির সভাপতি ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, সরকারি স্কুলের দোকান ভাড়া সম্পর্কে তিনি মোটেও অবগত নন। স্কুলটি সরকারি হলেও তারা তাদের নিয়ম মাফিক চলেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।