স্কুলে একদিন এসে ৭ দিনের স্বাক্ষর করেন শিক্ষকরা - দৈনিকশিক্ষা

স্কুলে একদিন এসে ৭ দিনের স্বাক্ষর করেন শিক্ষকরা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি |

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চর কাপাসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চরাঞ্চলের এই বিদ্যালয়টি যেন নামেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষক ঠিকমতো না আসায় উপস্থিত থাকে না ৪৫ শিক্ষার্থীর কেউই। এর ফলে শিক্ষকরা হাজিরা খাতায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিত দেখান মিছামিছিই। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় খোঁজখবরই রাখেন না খোদ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।

সম্প্রতি সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কেউই। নির্জনের কোনো ভূতের বাড়ির মতো পড়ে আছে বিদ্যালয়টি। মাঠে রয়েছে ভাঙা ঘরের আসবাবপত্র, জন্মেছে আগাছা। বেলা ১১টার পর আসেন বিদ্যালয়ের দপ্তরি-কাম-প্রহরী তাজুল ইসলাম। বিদ্যালয়ের কক্ষে প্রবেশ করে দেখা যায়, শিক্ষার্থীর বসার বেঞ্চ এলোমেলো। অগোছালো দেখা যায় একমাত্র অফিস কক্ষটিও।

জানা যায়, ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর হঠাৎ বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে আসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। এদিন মন্ত্রীর চোখে ওই বিদ্যালয়ের সামগ্রিক কার্যক্রমে অবহেলা ও বিভিন্ন অসঙ্গতির প্রমাণ মেলায় সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়, যা এখনও বলবৎ। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরুল হুদা সরকার।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি মাসের ১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হননি শিক্ষক নুরুল হুদা সরকার ও সহকারী শিক্ষক আবু তাহের সরকার। যার প্রমাণ মিলেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হাজিরা খাতায়। ১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদার উপস্থিতির স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি। অপর শিক্ষক আবু তাহের মাসুদ উপস্থিতির খাতায় অক্টোবর মাসের প্রথম দুই দিনের স্বাক্ষর দেখা গেলেও ৯ অক্টোবর পর্যন্ত বাকি দিনগুলোর হাজিরা শিটে তিনিও অনুপস্থিত।

এ সময় শিক্ষার্থী হাজিরা খাতা খুলে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫ জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ছয়জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১০ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১০ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাতজন। ৯ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সবাই ছিলেন অনুপস্থিত।

ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয়রা জানান, এই বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে আসেন না। তারা হঠাৎ এক দিন-দুই দিন স্কুলে আসেন। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও স্কুলে যায় না। হঠাৎ এলে তারা জানবে কীভাবে? ফলে পড়ালেখা শিঁকেয় উঠে গেছে, ঝরে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থীও। অথচ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার জন্য লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে বড় নৌকা।

তারা আরও জানান, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, চরম অবহেলা, অনিয়ম ও নানা অসঙ্গতির অভিযোগে মন্ত্রী যেখানে প্রধান শিক্ষককে অব্যাহতি দিলেন। তারপরও কারও টনক নড়েনি। একইভাবে অনিয়ম-অবহেলা করেই যাচ্ছেন অপর দুই শিক্ষকও। 

বিদ্যালয়ে রাতের আবাসস্থল হওয়ায় একমাত্র নিয়মিত আসেন দপ্তরি-কাম প্রহরী তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, এই স্কুলের শিক্ষকরা মূলত সপ্তাহে দুয়েক দিন বিদ্যালয়ে আসেন। নদীবেষ্টিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও আসতে ভয় পায়।

জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল হুদা সরকার মূল প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান এবং বলেন, ‘আমার চোখ অপারেশন হয়েছে দুদিন হলো। তার দাবি, তিনি মৌখিকভাবে দুই দিনের ছুটিতে আছেন। অন্য সহকারী শিক্ষক আবু তাহেরের বিষয়ে কোনো কিছু বলতে পারছি না।’

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে এমন বিষয় আমার জানা ছিল না বা আমাকে কেউ জানায়নি। অভিযোগের সত্যতা মিললে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গাইবান্ধার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030617713928223