স্কুল ব্যাংকিংয়ে আগ্রহ বাড়ছে শিক্ষার্থীদের। ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও নভেম্বর শেষে বেড়েছে হিসাব খোলার পরিমাণ। মাসটিতে মোট হিসাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ১৭১টি। এর আগের মাসে এর পরিমাণ ছিল ৩১ লাখ ৮১ হাজার ৯৭১টি। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব বেড়েছে ৯ হাজার ২০০টি। তবে আগের চেয়ে আমানতের পরিমাণ কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাস শেষে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। এর আগের মাসের তুলনায় আমানত কমেছে ৩৪ কোটি টাকা। অক্টোবর মাসে শিক্ষার্থীদের হিসাবে ২ হাজার ২৭৮ কোটি টাকার আমানত ছিল।
গত বছরের শুরু থেকেই দেশে ডলার সংকট চলছিল। একই সঙ্গে কমতে থাকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করছে। এতে ব্যাপকহারে চাপ বাড়ছে রিজার্ভে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ পরিবার ভুগছে আর্থিক সংকটে। ফলে স্কুল ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ কয়েক মাস ধরে কমছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর শেষে মোট স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের সংখ্যা ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ১৭১টি। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৯২ হাজার ২৩৫টি হিসাব শহরাঞ্চলে এবং ১৬ লাখ ৯৩৬টি হিসাব গ্রামাঞ্চলে খোলা হয়েছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের হিসাব ছিল ৩১ লাখ ৮৯ হাজার ৬০৬টি। আগস্টে এ ধরনের হিসাব খোলা হয় ৩১ লাখ ৮২ হাজার ৬৬১টি। এরপর সেপ্টেম্বরে এসে স্কুল ব্যাংকিংয়ের হিসাবের পরিমাণ আরো কমে দাঁড়ায় ৩১ লাখ ৮১ হাজার ৮৬০টি। পরের মাস অক্টোবরে হিসাবের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭১টি। এর আগে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর শেষে স্কুল ব্যাংকিংয়ে ২৮ লাখ ২৫ হাজার ৯৯২ শিক্ষার্থীর হিসাব খোলা হয়েছিল। এ সময় আমানতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২১৬ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে ও উৎসাহী করতে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে স্কুল ব্যাংকিং কর্মসূচির পুনঃপ্রবর্তন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেশ সফলতা পায় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব ও আমানতের পরিমাণ কিছুটা কমে আসছে। এরপর থেকেই স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় মুনাফার নানা স্কিম চালু করে।
২০১০ খ্রিষ্টাব্দে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। প্রথম বছরে ২৯ হাজার ৮০টি স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয়। এর পরের বছর ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ব্যাংকগুলোতে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৭টি হিসাব খোলা হয়।