দৈনিক শিক্ষাডটকম, ইবি: স্থায়ী অধ্যাপক নেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৩৬ বিভাগের ১৪টিতে কোনো। ফলে এ সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে না। একইসঙ্গে অভিজ্ঞ শিক্ষকের কৌশলী পাঠদান, উন্নত গবেষণাসহ নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করছে হাজারো শিক্ষার্থী। তবে এ সব বিভাগের দাবি, তারা শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী পাঠদান করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি অনুষদভুক্ত মোট ৩৬টি বিভাগে পাঠ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ২২টি বিভাগে ২৪৪ জন অধ্যাপক থাকলেও ফার্মেসি, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, ল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ ১৪ বিভাগে নেই কোনো অধ্যাপক। এছাড়া ফাইন আর্টস এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে নেই কোনো সহযোগী কিংবা সহকারী অধ্যাপকও।
অধ্যাপকশূন্য বিভাগগুলোর অধিকাংশই সাত বছর বা তার কম পুরোনো। চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন সময়ে এসব বিভাগে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ দেওয়া হলেও অধ্যাপক পদে হয়নি। কয়েকটি বিভাগে অধ্যাপক পদে নিয়োগ বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশ করা হলেও আবেদনকারী পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে ঐ পদগুলোর বিপরীতে প্রভাষক এবং সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের কথাও শোনা গেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান মফস্সল এলাকায় এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একই পদে তুলনামূলক ভালো সুযোগ-সুবিধা থাকায় এখানে অধ্যাপকরা আসতে চান না। একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করেও অধ্যাপকের পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ফলে একই সাবজেক্টে পড়ুয়া আমাদের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের থেকে আমরা শিক্ষা ও গবেষণায় পিছিয়ে পড়ছি।’
ফাইন আর্টস বিভাগে কোনো অধ্যাপক কিংবা সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক না থাকায় বিভাগটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এইচ এম আক্তারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘একটি বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক চারটি পদই জরুরি। তবে একজন সদ্য পড়াশোনা শেষ করা প্রভাষক আর একজন অধ্যাপকের মধ্যে নিঃসন্দেহে জ্ঞানের অনেক তফাত্। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও অনেক কিছু শেখার বিষয় থাকে। যদি বিভাগগুলোতে সিনিয়র শিক্ষক বা অধ্যাপক থাকেন, তাহলে সেগুলো আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুল মুঈদ বলেন, ‘এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, শিক্ষার্থীরা অনার্স-মাস্টার্স পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, অথচ কোনো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকের পাঠদান পায়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র দুইটি। কোনো বিভাগে অধ্যাপক নেই, আবার কোনো বিভাগে শুধু অধ্যাপক আছে, লেকচারার নেই। শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত আসে সাধারণত বিভাগগুলোর প্ল্যানিং কমিটি থেকে। কিন্তু এ নিয়ে বিভাগগুলোর কোনো উদ্যোগ দেখি না। তাছাড়া অধ্যাপক পাওয়াও কঠিন। তাই আমরা চেষ্টা করি, নিচের দিকের পোস্টগুলোতে নিয়োগ দেওয়ার।’