স্বাধীনতার ৫০ বছরের প্রাথমিক শিক্ষার হালচাল - দৈনিকশিক্ষা

স্বাধীনতার ৫০ বছরের প্রাথমিক শিক্ষার হালচাল

পদ্ম রানী দত্ত |

শিক্ষা আমাদের সংবিধানে মৌলিক চাহিদা হিসাবে স্বীকৃত। শিক্ষা মৌলিক অধিকার হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নাগরিকদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হলে আইনগত অধিকার পাওয়ার সুযোগ থাকতো। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও শিক্ষাক্ষেত্রে অবহেলা বা ঘাটতি দৃশ্যমান। শিক্ষার ভিত প্রাথমিক শিক্ষা। শিক্ষায় শিশুর অধিকার নিশ্চিতকরণে ও সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহীতা সৃষ্টির জন্য সংবিধানে প্রাথমিক শিক্ষা মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি থাকা প্রয়োজন। এতে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জিত হবে।

 মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রাথমিক শিক্ষা অগ্রাধিকার পায়। যার প্রেক্ষাপটে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু সরকার প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করে। এর ফলে ৩৭ হাজার বিদ্যালয়ের প্রায় দেড় লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষক সরকারি কর্মচারীর মর্যাদা পান। স্বাধীনতার সূচনালগ্নে যেখানে বঙ্গবন্ধুর সামনে সংকট নিরসন করা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সে সময় তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বিশাল অংকের অর্থের যোগান দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনভাতা প্রদান করে দুঃসাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষার জাতীয়করণ বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে নিঃসন্দেহে একটি মাইল ফলক।


 ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে‘বাংলাদেশে প্রথম শিক্ষা কমিশন’গঠিত হয়, ড.কুদরাত-ই-খুদা কমিশন নামে। এ কমিশন ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের পেশকৃত রিপোর্টে সুপারিশ করেন যে‘প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষারূপে পরিগণিত করে তাকে সর্বজনীন করতে হবে’। এরপরে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের মফিজ খান শিক্ষা কমিশন, ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের মফিজ উদ্দিন শিক্ষা কমিশনসহ ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় শিক্ষা উপদেষ্টা কাউন্সিল ও প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং সর্বজনীন করার সুপারিশ রাখেন। শিক্ষা কমিশণের কোন সুপারিশই আলোর মুখ দেখতে পায়নি।

বাংলাদেশ সরকার প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-৭৮) উল্লেখ করে যে, শিক্ষা হবে ‘গণমূখী ও সর্বজনীন’। সব ছেলেমেয়ের জন্য অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় আইনে নির্ধারিত হবে। প্রাথমিক শিক্ষা সর্বজনীন করার লক্ষ্যে সরকার প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে। কিন্তু এক্ষেত্রে তখন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
 

আশির দশকের গোড়া থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে বাংলাদেশ সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের লক্ষ্যে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট বেশ বড় আকারের কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ সকল উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে পৃথক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে একটি প্রাথমিক শিক্ষা আইন এবং ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে সংশোধিত প্রাথমিক শিক্ষা আইন প্রবর্তিত হয়। এ সব আইনের ধারায় ৪৮২টি উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং প্রতি উপজেলায় ৬-৮ জন সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পদ প্রবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি (৮-১০ জন মনোনীত সদস্য) এবং একটি প্রাথমিক স্কুলে নির্বাহী কমিটির (১১ জন মনোনীত ও নির্বাচিত সদস্য) ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই সময়ে প্রাথমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহেরও ব্যবস্থা করা হয়।

১৯৯৬-২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে ২৩টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে এবং সম্প্রসারণে সরকারের উদ্দেশ্য ছিল নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা করা,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ বাড়ানো, স্কুল পুনঃনির্মাণ, মেরামত, রেজিষ্টার্ড বেসরকারি স্কুলের উন্নয়ন, স্যাটেলাইট স্কুল নির্মাণ, শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু রাখা এবং উপজেলা রিসোর্স সেন্টার নামে নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করা। এ সময় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী আগামী বিভিন্ন সংস্থা যেমন, ADB, WORLD BANK, DFID, GTZ, NORAD, UNICEF, IDA, SIDA, USAID Ges IDB সম্মিলিত ভাবে কাজ করেছে। 

প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০০২ সালে ADBর আর্থিক সহায়তায় পরবর্তী ছয় বছরের জন্য এক নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন। এই পরিকল্পনা  ‘প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রোগ্রাম দুই’ (PEDP-II) নামে পরিচিত। PEDP-II এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারের শিক্ষানীতি, সবার জন্য শিক্ষা ও অন্যান্য প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তি, পাঁচ বছর শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে থাকা, প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সম্পন্ন করা এবং শিক্ষার হার ও শিক্ষার মানোন্নয়নে সহায়তা করা। বর্তমান  সরকার ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৩) এর আওতায় ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি করে শ্রেণিকক্ষ ডিজিটালকরণের লক্ষ্যে ৫০ হাজার ল্যাপটপ, ৩৬৭৪৬টি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং ৫১ হাজার সাউন্ড সিস্টেম  ক্রয়ের জন্য ৩টি আন্তর্জাতিক ক্রয় দরপত্রের বিপরীতে মোট ১৭টি চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে। 

এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন লাইন ডিভিশনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মোট ৫৫টি অভ্যন্তরীণ ক্রয় দরপত্র আহবান করে বিভিন্ন মালামাল সংগ্রহ করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ দরপত্রের মোট ৩২টি ই-জিপি পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় ই-মনিটরিং সিস্টেম সর্বত্র চালু করার লক্ষ্যে ৩৭০০টি ট্যাব ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। খুব শীঘ্রই এসকল ট্যাব বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া ১২টি নতুন পিটিআই এর মধ্যে ১১টিতে আইসিটি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে এবং পুরাতন ৫৫টি পিটিআই আইসিটি ল্যাবে আরো ১০টি করে নতুন ডেস্কটপকম্পিউটার ও ২টি করে এসি সরবরাহ করা হয়েছে। রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সরকারি-বেসরকারি সেবার মানোন্নয়ন ও ডিজিটাল সেবার অগ্রগতি প্রদর্শনের অংশ হিসাবে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭ মেলায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। 

আইসিটি বিভাগ কর্তৃক প্রস্ততকৃত প্রাথমিকের ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ২১টি বইয়ের ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহারের নিমিত্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল কন্টেন্ট এর ডিভিডি প্রেরণ করা হয়েছে। ৬০ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে আইসিটি কন্টেন্ট তৈরির বিষয়ে ১২ দিন ব্যাপী মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তার ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্প চালু করা হয়। শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি ও উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্প প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব বয়ে আনে। তারই ধারাবাহিকিতায় সরকার দেশব্যাপী উক্ত কর্মসূচি সম্প্রসারণপূর্বক কর্মসূচি দুটিকে একীভূত করে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে চালু করে ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প’। 

প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পের সুফল বিবেচনায় ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে থেকে পুনরায় প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প (২য় পর্যায়) গ্রহণ করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প (২য় পর্যায়)-এ সিটি কর্পোরেশন  এভং পৌরসভা ব্যতিরেকে গ্রামীণ এলাকার অস্বচ্ছল পিতা-মাতার সন্তান (৭৮,৭০,১২৯ জন ছাত্র ছাত্রী) উপবৃত্তি সুবিধাভোগীর আওতাভুক্ত ছিল। জুন ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ২য় পর্যায় প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার পর সরকার দুই বছর মেয়াদে (২০১৫-২০১৭) পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকা ব্যতীত সমগ্র বাংলাদেশের প্রাথমিক স্তরের সকল শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদানের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়) গ্রহণ করে। ৩য় পর্যায় প্রকল্পে সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীর লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৩০ লক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে পরবর্তীতে যা ১ কোটি ৪০ লক্ষ নির্ধারণ করা হয়। 

মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় সুবিধাভোগী মা/অভিভাবকগণ মোবাইলসহ অন্যান্য প্রযুক্তির সঙ্গে অধিকতর পরিচিত হচ্ছে যা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। মোবাইল অ্যাকাউন্টটি মা/অভিভাবকগণ সাধারণ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতো ব্যবহার করতে পারবেন। 
চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৩। পিইডিপি-৪ এর আওতায় ০৩টি কম্পোনেন্টের অধীনে ২১টি সাব-কম্পোনেন্ট বাস্তবায়িত হবে।  জাতিসংঘ সহ¯বরাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৫ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষায় লিঙ্গবৈষম্যের অবসান ঘটানোর জন্য সব দেশ একমত হয়। ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে দেশে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত  প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। তাতে আরও বলা হয়: “প্রাথমিক শিক্ষা হবে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক, অবৈতনিক এবং সবার জন্য একই মানের। 

প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলা হয়, কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে এক ও অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি সব ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বাধ্যতামূলক করা; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর দেশাত্মবোধের বিকাশ ও দেশ গঠনমূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করা; শিশুর মনে ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ; শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার, অসাম্প্রদয়িক দৃষ্টিভঙ্গি, মানবাধিকার, কৌতূহল, প্রীতি, সৌহার্দ্য, অধ্যবসায় ইত্যাদি নৈতিক ও আত্মিক গুণাবলি অর্জনে সহায়তা করা; বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিমনস্ক করা এবং কুসংস্কারমুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে উৎসাহিত করা; শিক্ষার্থীকে জীবনযাপনের জন্য আবশ্যকীয় জ্ঞান, বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা, জীবন-দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, সামাজিক সচেতনতা অর্জন এবং পরবর্তী স্তরের শিক্ষা লাভের উপযোগী করে গড়ে তোলা; কায়িক শ্রমের প্রতি আগ্রহ ও মর্যাদাবোধ এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা সৃষ্টি; আদিবাসীসহ সব ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করা সব ধরনের প্রতিবন্ধীসহ সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে গড়ে তুলেছিল এক ঐতিহাসিক আন্দোলন। মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া এত বড় আন্দোলন কোন পেশাজীবীরা আজ পর্যন্ত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়নি। তখনকার দিনে ঢাকায় প্রাথমিক শিক্ষকেরা পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য নিয়ে ৩ লক্ষের অধিক জনতা নিয়ে ঢাকা শহর অবরোধ করেন। সকল রাজনৈতিক দল প্রাথমিক শিক্ষকের দাবির সাথে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত একাত্ব হয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। শিক্ষা সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। এ উপলব্ধি থেকে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২০১৩ সালে আরও ২৬,১৯৩ টি প্রাথমিক  বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। শিক্ষা জাতীয় উন্নয়নের হাতিয়ার। মুখস্থবিদ্যার পরিবর্তে আনন্দদায়ক সৃজনশীল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী খ্রিষ্টাব্দে চিন্তা ও কল্পনাশক্তির বিকাশ ও অনুসন্ধিৎসু মননের অধিকারী হয়ে মানসম্মত প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করতে পারে, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। 
 
দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ও বিনামূল্যে বই বিতরণের সফলতা অর্জনে সম্ভব হয়েছিল, কেবলমাত্র জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার পক্ষে। কী দুঃসাহসী কর্মকান্ড? এছাড়াও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এত  শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, এবছর পোশাকের জন্য টাকা, প্রাক প্রাথমিক শ্রেণি ও বিদ্যালয় সুসজ্জিতরণ, শিক্ষা উপকরণ অবকাঠামো সুবিধা। বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর, স্লিপসহ বিভিন্ন খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্ধ। শিক্ষার্থীদের মাঝে পুষ্টিসমৃদ্ধ বিস্কুট বিতরণসহ শিশুদের বিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য সকল সুুযোগ সৃষ্টির প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত  উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষক দ্বারা ভরপুর আজকে প্রাথমিক বিদ্যালয়। 

পঞ্চম শ্রেণি শেষে সমাপনী পরীক্ষার জগদ্দল পাথর দুনিয়ার কোথাও নেই। আবার অষ্টম শ্রেণি শেষে জেএসসি পরীক্ষাও শিক্ষানীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করতে হলে জেএসসি পরীক্ষার নাম পরিবর্তন করে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা করা উচিত এবং এ জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠন করার প্রয়োজন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ২য় শ্রেণির মর্যাদা ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত তা সার্বিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, কৃষি শিক্ষাসহ সকল মন্ত্রনালয়ে ক্যাডার সার্ভিসের মাধ্যমে পদ্দোনতির সুযোগ আছে। কেবল নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা নামক বিশাল জনগোষ্টীর মন্ত্রনালয়ের। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় ক্যাডার সার্ভিস সৃষ্টি করে, সহকারি শিক্ষক পদকে এন্টি ধরে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করার গুরুত্ব অপরিসীম। এতে অভিজ্ঞ  জনগোষ্টীতে ভরে উঠবে প্রাথমিক শিক্ষা। অভিজ্ঞতা নিয়ে পথ চলবে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। মানসম্মত  প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে সফল হবে বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।   

 

লেখক: পদ্ম রানী দত্ত, প্রধান শিক্ষক, কাউখালী, পিরোজপুর।

একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ - dainik shiksha অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা - dainik shiksha সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে - dainik shiksha শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ - dainik shiksha এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে - dainik shiksha যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039620399475098