স্বার্থান্বেষী মহলের ফাঁদে পা দেবেন না, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী - দৈনিকশিক্ষা

স্বার্থান্বেষী মহলের ফাঁদে পা দেবেন না, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে মিথ্যাচার হচ্ছে। আমরা দেখছি, যারা ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যেসব আইডি থেকে এ প্রচারণা শুরু করেছেন এবং বিষয়টিকে এখন একটি আন্দোলনে রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন, তারা মূলত কোচিং ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নোট ও গাইড বই ব্যবসায়ীরা। কিছু শিক্ষক এর সঙ্গে জড়িত। কারণ তারা মনে করছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হলে ব্যবসায় মার খাবেন। সে কারণে তারা নামছেন।

সোমবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিভ্রান্ত না হয়ে নিজে যাচাই করুন। সঠিক তথ্য জানার চেষ্টা করুন। স্বার্থান্বেষী কোনো মহলের ফাঁদে পা দেবেন না। 

মন্ত্রী আরো বলেন,  তারা (অপপ্রচারকারীরা) চায় না শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে শিখতে, চিন্তা করতে শিখুক, অনুসন্ধিৎসু হোক, মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করুক। ওরা চায় মগজ ধোলাইয়ের শিক্ষাই চালু থাকুক। তারা বিভিন্ন ভুল ও মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে চলা এমন কিছু অপপ্রচার উল্লেখ করে সঠিক তথ্যটি জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রী জানান, নতুন শিক্ষাক্রমে পড়াশোনা নেই, পরীক্ষা নেই, শিক্ষার্থীরা কিছু শিখছে না বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তবে সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি পড়বে, নিজেরা সক্রিয়ভাবে পড়বে, শিখবে। দলগত কাজ করে আবার তা মূল্যায়ন হবে প্রতিটি কাজের। আবার ষন্মাসিক মূল্যায়ন ও বার্ষিক মূল্যয়নও হবে। কাজের পরীক্ষা ঠিকই থাকছে, কিন্তু পরীক্ষার ভীতি থাকছে না। পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়া এবং না হওয়া আছে। শুধু তাই নয়, সাতটি স্কেলে শিক্ষার্থীদের রিপোর্ট কার্ডও হবে। 

মন্ত্রী বলেন, আগে নবম ও দশম শ্রেণিতে মোট ৪০০ নম্বরের বিজ্ঞান থাকলেও নতুন শিক্ষাক্রমে তা কমিয়ে ১০০ নম্বরের করা হয়েছে বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে, নতুন শিক্ষাক্রমে কোনো বিষয়ে নির্দিষ্ট নম্বর বরাদ্দ নেই। আছে শিক্ষার্থীরা পাদর্শিতার পর্যায়। কাজেই এ বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই।

তিনি জানান, নতুন শিক্ষাক্রমের বিজ্ঞানের বিষয় কমিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অপপ্রচার চলছে। তবে, সঠিক তথ্য হলো নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য অপেক্ষাকৃত বেশি সময় রাখা হয়েছে। সার্বিক দিক দিয়ে আগের চেয়ে বিজ্ঞানের গুরুত্ব বেড়েছে, বিষয়বস্তুর পরিধিও বেড়েছে। 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বলা হচ্ছে, ব্রিটেনের কারিকুলামে নবম শ্রেণিতে বিষয় বাছাইয়ের সুযোগ আছে, কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে বাংলা মাধ্যমে তা রাখা হয়নি। তবে সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছ, প্রচলিত ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাক্র ও ইংল্যান্ডের জাতীয় শিক্ষাক্রম এক না। ইংল্যান্ডসহ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের শিক্ষাক্রমেই নবম ও দশম শেণি পর্যন্ত বিষয় নির্বাচনের সুযোগ থাকে না।

মন্ত্রী বলছেন, অপপ্রচারকারীরা বলছেন বিজ্ঞান শিক্ষাকে খাটো করতে বিভাগ বিভাগজন তুলে দেয়া হয়েছে। তবে সঠিক ব্যাখ্যাটি হলো, নবম শ্রেণিতে পৃথিবীর প্রায় কোনো দেশেই বিভাগ বিভাজন করা হয় না। দশম বা একাদশ শ্রেণিতে হিয়ে সাধারণত বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা দেয়া হয়। 

উপকরণ কিনতে হয় তাই শিক্ষা ব্যয় বেড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সঠিক ব্যাখ্যাটি হচ্ছে, উপকরণের দাম বা চাকচিক্য বা সৌন্দর্য বিবেচ্য না। স্থানীয় সহজলভ্য ও পুনঃব্যবহার যোগ্য কাগজ বা উপকরণ ব্যবহারের নির্দেশনা বারবার দেয়া হচ্ছে। ফলে ব্যয় বাড়ার কোনো কারণ নেই। আর নতুন শিক্ষাক্রমে কোচিং বা নোট বইয়ের খরচতো লাগছেই না। 

গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্টি উপকরণ কিনতে পারছে না বলে বৈষম্য বাড়ছে দাবি করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, সহজলভ্যতা নিশ্চিত করেই উপকরণ, শিখন-শেখানো পদ্ধতি নির্বাচন করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিকল্প উপায় রাখা হয়েছে। ফলে বৈষম্য তো নয়ই বরং গ্রামের স্কুলগুলো ভালো করছে। কোচিং ও গাইড বইয়ের খরচ লাগছে না। ফলে বৈষম্য কমেছে। অস্বচ্ছল পরিবার থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে ভালো করছে। 

মন্ত্রী বলেন, তার বলছে বাসায় গিয়ে দলগত কাজ করতে হয়, যা বাস্তাবে সম্ভব নয়, ফলে ডিভাইস নির্ভরতা বেড়েছে। এটি ঠিক নয়। সঠিক তথ্য হলো সব দলগত কাজ বিদ্যালয়ে করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাড়িতে কোনো দলগত কাজ দেয়া হয় না। 

শিক্ষকরা বাসা থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে আসতে বলেন বলে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার আনার নির্দেশনা নেই। জীবন দক্ষতার অংশ হিসেবে শুধুমাত্র একটি অভিজ্ঞতা নির্দিষ্ট ক্লাসে রান্না আছে। 

শিক্ষার্থীরা না লেখায় বানান ও ব্যকরণ শিখছে দাবি করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। মন্ত্রী জানান, সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে, যেকোনো সময়ের চেয়ে শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রমে বেশি লিখতে হচ্ছে। কারণ প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি অভিজ্ঞতায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে প্রায়োগিক লেখার সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে শুধু বানান বা ব্যকরণ না, শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে নিজেদের প্রয়োজনে লিখতে পারছে। 

গণিত অনুশীলনের সুযোগ নেই দাবি করে বিভ্রান্ত ছাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, প্রতিটি গণিতের ধারণা এখন প্রায়োগিক ক্ষেত্রে বাস্তব পরীক্ষা ও ব্যাপক অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা করছে। 

ধর্ম শিক্ষায় লিখিত পরীক্ষা রাখা হয়নি বলে মিথ্যাচার করা হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সব বিষয়ের জন্য একই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে লিখিত মূল্যায়নও অর্ন্তভুক্ত আছে।

শিক্ষাকে দক্ষতাভিত্তিক করতে গিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক শিক্ষার সুযোগ কমে গিয়েছে দাবি করে মিথ্যাচার করা হচ্ছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, বুদ্ধিবৃত্তিক শিক্ষার ভিত্তি হচ্ছে জেনে, বুঝে, উপলব্ধি ও অনুবাধন করে তা প্রয়োগ করার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় নতুন ধারণা অনুসন্ধান করা। মুখস্তনির্ভরতা বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটায় না। 

অনেকে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বলছেন, তাদের সন্তানরা ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেনা। মন্ত্রী বলেন, সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে এ শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীরা যখন উচ্চমাধ্যমিক পাস করবে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন হবে। সেসব কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। 

চাকরির  ক্ষেত্রে নতুন শিক্ষাক্রমের ফল কাজে আসবে না বলে অভিভাবকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, চাকরি ক্ষেত্রেও পারদর্শিতার মূল্যায়নের ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। সেসব কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। 


শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030560493469238