বদলিহতাশ এমপিওভুক্ত শিক্ষকের মৃত্যু - দৈনিকশিক্ষা

বদলিহতাশ এমপিওভুক্ত শিক্ষকের মৃত্যু

দৈনিক শিক্ষাডটকম, কক্সবাজার |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, কক্সবাজার : বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা না থাকায় হতাশায় মৃত্যুবরণ করেছেন কক্সবাজারের মুহাম্মদিয়া রিয়াজুল ইসলাম দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক খাইরুল ইসলাম। 

গত বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে তিনি স্ট্রোক করলে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তৃব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। 

জানা গেছে, খাইরুলের বাড়ি দিনাজপুরে। তার বড় ছেলের বয়স ৬ বছর আর ছোট মেয়ের বয়স তিন বছর। এনটিআরসিএর তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন খাইরুল। স্ত্রী, সন্তানদের ছেড়ে নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে চাকরি করার কারণে তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিজে চয়েস দিয়ে নিয়োগ পেয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি না থাকায় হতাশায় ছিলেন তিনি, এমন দাবি খাইরুলের সহকর্মীদের।  

এদিকে সন্তানদের ছেড়ে থাকা নিয়ে হতাশার কথা ফেসবুকেও শেয়ার করেছেন খাইরুল। সম্প্রতি ছেলেমেয়ের ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘তোদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কী আমি কোনোদিনও গড়তে পারব না? বাসা থেকে বের হয়ে ছুটছি শুধু তোদের জন্য, নিজের পরনের শার্ট আর পায়ে জুতো পরারও কথা ভাবিনি কোনোদিন। শুধু তোদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর সমাজে একজন ভালো মানুষ হিসেবে দেখব বলে।’ মৃত্যুর একদিন আগেও ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন খাইরুল। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘শিক্ষকতা এখন একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা।’

খাইরুল ইসলামের স্ত্রী জান্নাতুন নিসা বলেন, বিভিন্ন সময় তিনি কর্মস্থলের লোকজন ও ওই এলাকার খাবার ভালো নয় বলে জানিয়েছেন। সে কারণে ওই এলাকা থেকে বদলি হয়ে নিজ এলাকা বা আশপাশে আসতে চেয়েছেন। তবে সরকারিভাবে বদলির নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়ার পরও সেটি থমকে যায়। এ কারণে তিনি আরো হতাশ হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, হতাশা থেকে তিনি কয়েক মাস মাদরাসায় অনুপস্থিত ছিলেন। তবে মাদরাসা থেকে তাকে সেই সময়ের বেতন দেয়ার কথা জানানো হয়েছিল। পরে তিনি যখন বেতন আনতে যান, তাকে জানানো হয় ওই সময়টুকু তাকে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে। এ কারণে তিনি আরও বেশি অস্থির হয়ে পড়েন। পরে তো বেন স্ট্রোক করেই চলে গেলেন।

খাইরুলের বাল্যবন্ধু মাসুম আহমেদ জানান, অনেকদিন ধরেই বদলির জন্য চেষ্টা করছিলেন খাইরুল। সন্তানদের ছেড়ে কক্সবাজারে চাকরি করতে তার কষ্টের কথাও জানিয়েছিলেন। বদলি নিয়ে সরকারের মধ্যে আলোচনা হওয়ায় আশার আলো দেখেছিলেন। তবে বারবার সেই সভা স্থগিত হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।

তিনি জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি বিষয়ে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবর সভা হয়েছিল। পরে চলতি বছর জানুয়ারির শুরুতে সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের ইচ্ছায় সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি সভার তারিখ নির্ধারিত হওয়ার পর সেটিও স্থগিত করা হয়। এ সভা স্থগিতের কারণে হতাশ হয়ে পড়েন খাইরুল। সেই হতাশা থেকে ৩১ জানুয়ারি বুধবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকরা বলছেন- বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থায় বদলি না থাকায় দূর-দূরান্তে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা খুবই অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে সুপারিশকৃত শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ পেলেও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশকৃত শিক্ষকরা সেই সুযোগ পাননি। 

 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039260387420654