আমাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় আর কিছু না থাকুক, ডিম থাকবেই। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ডিম আমরা নানাভাবে খেয়ে থাকি। কেউবা ভেজে খান, আবার কেউ কেউ পোচ করে খান। আবার কেউবা সেদ্ধ ডিম খেতে অনেক বেশি পছন্দ করেন।
ডিম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এবং পুষ্টিকর একটি খাদ্য। পুষ্টিবিদদের মতে, ডিম ভাজা খাওয়ার চেয়ে হাফ বয়েল বা সেদ্ধ করে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। ডিমকে ভিটামিন ক্যাপসুল বলেও মনে করা হয়। গুণাগুণ বিবেচনা করলে হাঁসের ডিম ও মুরগির ডিম প্রায় একই। তবে হাঁসের ডিমে তুলনামূলকভাবে পুষ্টি কিছুটা বেশি থাকে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির নিউট্রিশন অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ‘একটি ডিমে ৭৫ ক্যালরি, ৫ গ্রাম চর্বি, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ৬৭ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ৭০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম এবং ২১০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল রয়েছে। এ ছাড়া ডিম ভিটামিন এ, ডি, এবং বি১২ এর একটি বড় উৎস। দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে, এনার্জি বাড়াতে, হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে ডিম সহায়তা করে। এ ছাড়া প্রোটিনের উৎস ডিম ত্বকের, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য, চুলের বৃদ্ধিতে, গর্ভাবস্থায়, পেশির জোর বাড়াতে, ক্যানসার প্রতিরোধে, চোখের সমস্যায়, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সুস্থ মানুষদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে সমস্যা হয় না। একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় ৩০০ গ্রাম কোলেস্টেরল গ্রহণ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে কিছুই হবে না।’
আসুন জেনে নেই ডিমের পুষ্টিগুণের কথা–
১. সকালের নাশতায় ডিম রাখুন। কারণ এই ডিম সারা দিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে।
২. পুষ্টিগুণে ভরপুর ডিমে আছে প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি১২, ভিটামিন ডি। ভিটামিন এ ত্বকের জন্য ভালো। ভিটামিন ডি হাড় সুস্থ ও মজবুত করে।
৩. ডিম প্রোটিনের ভালো উৎস। প্রোটিন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, ত্বক, চুল এবং শরীরের টিস্যু ভালো রাখতে সহায়তা করে।
৪. ডিম শরীরে দীর্ঘসময় শক্তি সঞ্চয় করতে সহায়তা করে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে ডিম খেতে পারেন।
৫. ডিম শিশুদের দৈহিক বিকাশের পাশাপাশি মেধা বিকাশেও ডিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৬. ডিমের কুসুমে থাকে কোলিন। মস্তিষ্কের বিকাশে কোলিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিম চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
তবে ডিমের যেমন উপকারিতা আছে, তেমনি অপকারিতাও আছে। নিউট্রিশন অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ‘অতিমাত্রায় ডিম খেলে আপনার ক্ষতি হতে পারে। যেমন– ওজন বৃদ্ধি , রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ডিমের সাদা অংশে যেহেতু খুব ভালো প্রোটিন অ্যালবুমিন আছে, তাই মাংসপেশি বাড়ানোর জন্য কিন্তু অতিরিক্ত অ্যালবুমিন গ্রহণে শরীরে বায়োটিন নামের এক ভিটামিনের শূন্যতা দেখা দেয়।
ডিমে অনেকের অ্যালার্জি থাকে, সেক্ষেত্রে ডিম খেলে তাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা হতে পারে। আবার বেশি পরিমাণে ডিম খেলে পেটে গ্যাস বা অস্বস্তি হতে পারে। সকালের নাস্তা বা রাতের খাবারের জন্য ডিম স্বাস্থ্যকর। খালি পেটে বা ভরা পেটে, দুইভাবেই ডিমের উপকারিতা আছে। তবে খালি পেটে ডিম খেলে অনেক সময় এসিডিটি হতে পারে।’