তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে মাসিক ভাতা, পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সুবিধা প্রদানের দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে সমাজ কল্যাণ সচিব, অর্থ সচিব, শিক্ষা সচিব ও আইন সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, হিজরা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠী। হিজরারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, সমাজ থেকে অবহেলিত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্যের শিকার।
দেশের সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের যেকোনো অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার বিশেষ বিধান প্রণয়ন করতে পারবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, সরকার এই চরম অবহেলিত হিজরা জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালে হিজরাদের উন্নয়নে নীতিমালা করেছে কিন্তু সেটা কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ এবং হিজরাদের কল্যাণে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ফলশ্রুতিতে হিজরা জনগোষ্ঠী মানবেতর জীবনযাপন করছে এবং বেঁচে থাকার জন্য মানুষের কাছে হাত পাততে বাধ্য হচ্ছে।
আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকার ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের সকল নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং সংবিধানের মৌলিক অধিকার। ২৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকদের মধ্যে কোনো প্রকার বৈষম্য করা যাবে না।
বাংলাদেশের হিজরা জনগোষ্ঠী এ দেশের নাগরিক এবং সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের কাছ থেকে সমান সুযোগ সুবিধা লাভের অধিকারী। কিন্তু সরকার হিজরা জনগোষ্ঠীর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ফলশ্রুতিতে হিজরা জনগোষ্ঠী মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে এবং সংবিধানের মৌলিক অধিকার ৩২ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত হচ্ছে।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, জন্মের পর থেকে হিজরা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর থেকে হিজরারা তাদের পরিবার থেকেই বঞ্চনার শিকার হন। পরিবার থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ছাড়া শারীরিক পার্থক্যের কারণে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা করতে পারে না। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় বঞ্চনার কারণে তারা স্বাভাবিক কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারে না। ফলশ্রুতিতে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বঞ্চিত হয়ে, সমাজ থেকে অবহেলিত হয়ে, কর্মজীবনে যথাযথ সুবিধা না পেয়ে এবং সর্বোপরি রাষ্ট্র কর্তৃক বৈষম্যের শিকার হয়ে হিজরা জনগোষ্ঠী অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছে এবং মানুষের কাছে হাত পাততে বাধ্য হচ্ছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, সরকার দেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে নানাবিধ মাসিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে। যেমন দেশের বয়স্ক নাগরিকদের জন্য বয়স্ক ভাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক ভাতা, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন খাদ্য সহায়তা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের হিজরা জনগোষ্ঠী দেশের সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠী। তাই হিজরা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে দেশের প্রতিটি হিজরাকে মাসিক ভাতা দিতে হবে, হিজরাদের জন্য পৃথক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। এ ছাড়া হিজরাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী হিজরাদের জন্য সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হিজরা জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে এবং হিজরাদের কল্যণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় হাইকোর্টের রিট করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।