টানা পাঁচ দিনের ঈদুল ফিতরের টানা ছুটি শেষে গতকাল সোমবার খুলেছে সরকারি, বেসরকারি অফিস, আদালত। এদিন সকালে অফিস-আদালত খুললেও ঈদের রেশ এখনো কাটেনি। চিরচেনা রূপে ফিরতে আরো কয়েক দিন লাগবে বলে জানান আইনজীবীরা।
গত ১১ এপ্রিল দেশে উদযাপিত হয় ঈদুল ফিতর। ঈদ উপলক্ষে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল তথা বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার সরকারি ছুটি, শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ও রোববার পহেলা বৈশাখ মিলে টানা পাঁচদিন ছুটি কাটান সরকারি চাকরিজীবীরা।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, ছুটি শেষে সবাই ঈদ শুভেচ্ছা ও নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও সেবাপ্রার্থীরা তেমন না আসায় কাজের চাপও ছিলো না। গতকাল অনেকে সরাসরি অফিসে এসেছেন। কেউ কেউ আবার পরিবার নিয়ে গতকালই ঢাকায় এসেছেন। কেউ একা এসেছেন, পরিবার পরে আনবেন।
ব্যাংকগুলোতে ঈদের আগে যেমন গ্রাহকদের ভিড় ছিলো সোমবার সে অর্থে কোনো ভিড়ই ছিলো না। ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপস্থিতি সন্তোসজনক হলেও ঢাকার বিচারিক আদালত পাড়া ছিলো একেবারে ফাঁকা।
সরকারি-বেসরকারি বেশিরভাগ কর্মজীবী যারা ঈদে বাড়ি গেছেন তারা অনেকে ঐচ্ছিক ছুটি নিয়েছেন। ফলে অফিস আদালতে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হতে আরো কয়েকদিন লেগে যাবে।
ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবস গতকাল সোমবার আদালত পাড়া ঘুরে কোথাও চিরচেনা সেই ভিড় দেখা যায়নি। আদালতের এজলাস, বারান্দা, আদালত প্রাঙ্গণ, আইনজীবী সমিতি, রাস্তাঘাট ছিলো একদমই ফাঁকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বর্তমানে ১০৭ জন বিচারক কর্মরত। গতকাল ৫৫ জন উপস্থিত ছিলেন, ৫২ জনই ছিলেন ছুটিতে।
ঢাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুর কবীর বাবুল দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, ঢাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেটের ৫ জন ছুটিতে আছেন। তিনি আরো জানান, ৫ বিচারক ছুটিতে থাকলেও বিচারকাজ ঠিকই চলছে। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ, হাজিরা, জামিন শুনানি সবই সময়মতো হচ্ছে। কোনো অসুবিধা হয়নি।
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা সোহেল আলম দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির ৩৭ ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরীসহ ২২ ম্যাজিস্ট্রেট ছুটিতে আছেন। তবে বিচারে যেনো কোনো বিঘ্ন না ঘটে এবং বিচারপ্রার্থীরা যাতে হয়রানি না হন সেজন্য উপস্থিত ১৫ ম্যাজিস্ট্রেটকে সকল কোর্টের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। এতে করে মামলায় কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি হবে না।
ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মোট বিচারকের সংখ্যা ৩৬ জন। আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, গতকাল ৩৬ বিচারকের মধ্যে ২৫ জনই উপস্থিত থেকে বিচারকাজ চালাচ্ছেন। ১১ বিচারক ছুটিতে আছেন।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির শাহ মো. মামুন জানান, মহানগর জজশিপের ২৪ বিচারকের মধ্যে মহানগর দায়রা জজসহ ১৪ জনই ছুটিতে আছেন। ১০ জন বিচারককে সকল কোর্টের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছে।
আইনজীবী ও আদালতের কর্মকর্তারা জানান, ঈদের ছুটির সঙ্গে সকলে হয়তো দু-এক দিন করে বাড়তি ঐচ্ছিক ছুটি নেয়ায় বিচারকের উপস্থিতি কম। তবে বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীর সংখ্যাও অনেক কম। তাই বিচারের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না। সবকিছু স্বাভাবিক হতে আরো দু-এক-দিন সময় লাগবে। আগামি সপ্তাহ হতে চিরচেনা রূপে ফিরে আসবে ঢাকা।