সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো থেকে আসা চাহিদা অনুসারে চলতি বছরের জন্য ১৭ লাখ ৭৭ হাজার অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর জন্য বই ছাপানো হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মুখে কাগজ সংকট ও বিপর্যস্ত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার যখন সব ক্ষেত্রে কৃচ্ছ সাধন করে চলছে তখন টনে টনে অতিরিক্ত বই ছাপানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ের চাহিদা সংগ্রহে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। সরকারি টাকা অপচয় রোধে গ্রহণযোগ্য পাঠ্যবইয়ের চাহিদা পাঠাতে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের কঠোর বার্তা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
জানা গেছে, আগামী ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জন্য প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাঠ্যবইয়ের জন্য চাহিদা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের বইয়ের চাহিদা পাঠাতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে উপপরিচালকদের লিখিত নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। যার কপি দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে এসেছে।
গত ২৪ জানুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাঠানো নির্দেশনায় উপপরিচালকদের গ্রহণযোগ্য বইয়ের চাহিদা দিতে বলেছে অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের বই বিতরণ শাখার সহকারী পরিচালক ফয়েজুন নাহার স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পাঠ্যপুস্তকের অপচয় রোধে চাহিদা পঠানোর ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সম্ভাব্য চাহিদায় উল্লেখিত শিক্ষার্থীর সংখ্যার তুলনায় ২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রকৃত শিক্ষার্থী ১৭ লাখ ৭৭ হাজার কম পাওয়া গেছে। সরকারি টাকার অপচয় রোধে পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা যথার্থ ও গ্রহণযোগ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়।
ফয়েজুন নাহার দৈনিক আমাদের বার্তাকে ওই নির্দেশনা পাঠানোর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের এপিএসসির তথ্য যাচাই বাছাই চলছে। এখনো রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকৃত শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিলো পৌনে দুই কোটি। কিন্তু চাহিদা দেয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বেশি ছিলো। তাই চাহিদা পাঠানোর বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
প্রতি বছর বিনামূল্যে বই ছাপানোর আগে মাঠ থেকে বইয়ের তথ্য সংগ্রহ করে তারপর দরপত্র করা হয়। প্রকৃত শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও ৫ শতাংশ বই বাফার স্টক বা দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ছাপানো হয়। তবে, ১৭ লাখ ৭৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য অতিরিক্ত বই ছাপাতে সরকারের কত টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সে তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি।
অধিদপ্তর থেকে উপপরিচালকদের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তার আওতাধীন সব উপজেলা ও থানা থেকে প্রাপ্ত চাহিদার তথ্য যাচাই করবেন। ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব তথ্য উপপরিচালকদের কাছে পাঠাবেন। উপপরিচালকরা যাচাই করে তথ্য ৭ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাবেন। তথ্যের গ্রহণযোগ্যতার জন্য ২০২১. ২০২২ ও ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষার্থীর সংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে বলেও বলা হয়েছে নির্দেশনায়। আর সিআরভিএস তথ্যের সঙ্গেও চাহিদার মিল থাকতে হবে বলে জানানো হয়েছে উপপরিচালকদের।