ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া সব মামলা বাতিলের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছে ১৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থা। একই সঙ্গে সাংবাদিকসহ এ আইনের মামলায় আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করা এ সংস্থাগুলো। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) ওয়েবসাইটে ১৯ সংস্থার চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বদলে সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার খসড়া এখন যেভাবে রয়েছে, শেষ পর্যন্ত সেটাই আইনে পরিণত হলে এটি একটি ‘কালো আইন’ হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে এমন মতামত তুলে ধরে টিআইবি।
১৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থার চিঠিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তবে এ আইনের বদলে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত আইনটিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশ কয়েকটি দমনমূলক ধারা থাকছে, যেগুলো আগে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, নাগরিক স্বাধীনতাসহ স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মানবাধিকারকর্মীদের কণ্ঠরোধে ব্যবহার করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ই-মেইলে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমদকে চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, শুধু শান্তিপূর্ণভাবে নিজের মতপ্রকাশের কারণে যাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে, কর্র্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে সেসব মামলা বাতিল করা। একই সঙ্গে এসব মামলায় যাদের আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
যে সংস্থাগুলো চিঠি দিয়েছে সেগুলো হলো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আর্টিকেল নাইনটিন (দক্ষিণ এশিয়া), এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, বাংলাদেশি জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, সিভিকাস : ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, কোয়ালিশন ফর উইমেন ইন জার্নালিজম (সিএফডব্লিউআইজে), কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস, ফোরাম ফর ফ্রিডম এক্সপ্রেশন, বাংলাদেশ; ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড, আইএফইএক্স, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে), ইন্টারন্যাশনাল ওমেন’স মিডিয়া ফাউন্ডেশন, পেন আমেরিকা; পেন বাংলাদেশ, পেন ইন্টারন্যাশনাল, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ও রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস।
চিঠিতে সংবাদ প্রকাশের জেরে আরটিভির ঢাকা কার্যালয়ের নিজস্ব প্রতিবেদক অধরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা আইনও ‘কালো আইন’ হবে মনে করছে টিআইবি : সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া যেভাবে রয়েছে, শেষ পর্যন্ত সেটাই আইনে পরিণত হলে এটি একটি ‘কালো আইন’ হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে মনে করছে টিআইবি। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ : পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির এ মতামত তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি নিবর্তনমূলক আইন। যেভাবে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট কালো আইন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল, বর্তমানে যে অবস্থায় আছে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের খসড়া, সেটি প্রণীত হয়ে গেলে, এটাও কালো আইন হিসেবে চিহ্নিত হবে। এটি বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে। এক ধরনের বার্তা দেশবাসীর মধ্যে দেওয়া হচ্ছিল যে, মতপ্রকাশ করলে, তথ্য প্রকাশ করলে নিজের বিবেক-চিন্তা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করলে আপনি ঝুঁকির সম্মুখীন হবেন, ওই বার্তাটিই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।’
পাঁচ বছর আগে সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম বদলে সাইবার সিকিউরিটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নাম বদলের সঙ্গে আইনের অনেক ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হলেও এর অপপ্রয়োগের অভিযোগ ছিল। কারণ পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেওয়া হয়েছিল।