দৈনিক শিক্ষাডটকম, নাটোর ও নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে জাল সনদধারী শিক্ষক নিয়োগে অভিযুক্ত নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র প্রামানিককে নির্দোষ দাবি করেছেন তার স্ত্রী ও একই কলেজের শিক্ষিকা বীথিকা সরকার। অধ্যক্ষের স্ত্রী জানিয়েছেন, প্রভাষক মোজাম্মেলের সনদ জাল থাকায় তাকে এমপিওভুক্ত করতে পারেননি অধ্যক্ষ। তবে প্রভাষক মোজাম্মেলকে নিয়োগ দিতে অধ্যক্ষ ঘুষ নেননি বলেও দাবি তার। এদিকে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
শুক্রবার সকালে নাটোর শহরে সংবাদ সম্মেলন করেন অধ্যক্ষ নয়নের স্ত্রী ও সহকর্মী বীথিকা সরকার। এর আগে গত মঙ্গলবার অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র প্রামানিককে শিক্ষক নিয়োগের নামে প্রতারণার মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছিলো আদালত। তিনি জামিনে মুক্ত হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্রের স্ত্রী শিক্ষিকা বীথিকা সরকার দাবি করেন, তার স্বামীর বিরুদ্ধে ২০ লাখ নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করা নাটোর সদরের সাধুপাড়ার আয়েজ উদ্দীনের ছেলে মোজ্জাম্মেল হককে কলেজে প্রভাষক পদে চাকরি দেয়ার জন্য কোনো টাকা দেননি। ওই শিক্ষকের একটি সনদ জাল থাকায় অধ্যক্ষ তার বেতন করতে পারেননি বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মোজ্জাম্মেল হক যে শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি জমা দিয়ে চাকরি নিয়েছিলেন তা জাল। সনদের আসল মালিকের নামও মোজাম্মেল হক। তবে তিনি বরগুনার প্রার্থী। তার বাবার নাম মোশাররফ হোসেন ও মায়ের নাম হাসিনা বেগম। তবে মোজাম্মেল তা জাল করে নিজের বাবা মো. আয়জ উদ্দিন ও মা মরিয়ম বেগমের নাম বসিয়ে সনদটি জাল করেছেন। এ বিষয়ে যাচাই প্রতিবেদন ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএর পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন শাখার সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মোজাম্মেল হক শুধু সনদ জাল করেননি। তার সনদ যাচাইয়ের জন্য এনটিআরসিএ কার্যালয়ে পাঠানো হলে আমরা তা জাল বলে শনাক্ত করি। কিন্তু মোজাম্মেল হক ওই যাচাই প্রতিবেদনও জাল করে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, ঘুষ নিয়ে অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র প্রামানিক প্রভাষক মোজাম্মেল হককে জাল সনদ তৈরি করে চাকরি নিতে সহায়তা করেছেন। কিন্তু এমপিওভুক্ত করতে না পারায় মোজাম্মেলের সঙ্গে অধক্ষের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সে দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে মোজাম্মেলের সনদটি যাচাই করতে নিজেই এনটিআরসিএতে পাঠান অধ্যক্ষ।
কর্মকর্তারা বলছেন, গত ৬ নভেম্বর মোজাম্মেলের সনদ যাচাই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এনটিআরসিএ। এতে বলা হয়, সপ্তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার যে সনদ দিয়ে মোজাম্মেল চাকরি পেয়েছেন তা জাল। তাই মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে তা এনটিআরসিএকে জানাতে বলা হয়েছে অধ্যক্ষকে।
এদিকে শুক্রবার যখন অধ্যক্ষকে নির্দোষ দাবি করে তার স্ত্রী সংবাদ সম্মেলেন করছিলেন ঠিক একই সময়ে কলেজের সামনের রেলস্টেশনে প্রতারণার অভিযোগে অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্রকে চাকরি থেকে বরখাস্তের দাবিতে ‘স্থানীয় মাধনগর ইউনিয়নবাসীর’ ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়েছে। মানববন্ধবে বক্তব্য দেন, মাধনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সঞ্চয়, ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান রকি, মাধনগর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন মৃধা, যুগ্ম সম্পাদক সাইদুর রহমান টুকু, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শামীম হোসেন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ আপনসহ অনেকে।
বক্তারা বলেন, অধ্যক্ষ নয়ন চন্দ্র কলেজে নিয়োগসহ নানা দূর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। শহরের তেবাড়িয়ায় বহুতল ভবণ নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। তাকে দ্রুত অধ্যক্ষের পদ থেকে অপসারণের দাবি জানান স্থানীয়রা।
এদিকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায় করা প্রভাষক মোজাম্মেল হক দাবি করেছেন, তিনি অধ্যক্ষকে দুইবারে নগদ ২০ লাখ টাকা দিয়ে চাকরি নিয়েছেন। তবে তার শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জাল নয় বলে দাবি করেন তিনি। তার দাবি, অধ্যক্ষের স্ত্রী বীথিকা সরকার একইসঙ্গে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা এবং এই কলেজে চাকরি করছিলেন। এ বিষয়টিসহ অধ্যক্ষের দুর্নীতি নিয়ে তিনি মুখ খুললে তারা উভয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছেন।