কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আগামী ২৫ জুন পুনারায় উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা নিয়ে ইতোমধ্যে একটি জাহাজ বাংলাদেশে এসেছে। এখন, বন্দর থেকে কয়লা খালাশ করে বিদ্যুকেন্দ্রে পৌঁছানো এবং জ্বালানি লোড করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে ৪৮-৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে। সে হিসেবে, আগামী ২৫ জুন থেকেই কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যাবে বলে নিশ্চিত করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আনার যাবতীয় প্রক্রিয়া এ মাসের শুরুতেই সম্পন্ন করা হয়। সে অনুযায়ী, ২২ জুন থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ১৭টি জাহাজ প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার মে.টন কয়লা নিয়ে আসবে। এর মধ্যে, প্রায় ৩৬ হাজার টনের প্রথম চালান বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বাংলাদেশ সমুদ্র অঞ্চলে প্রবেশ করে।
ডলার সংকটে যথাসময়ে কয়লা আমদানি ব্যাহত হওয়ায় গত ২৫ মে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট এবং ৫ জুন দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রেক্ষিতে দেশে লোডশেডিং বেড়ে যায়। তখন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু মানুষকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে উদ্ভূত পরিস্থতি থেকে উত্তোরণের আশ্বাস দেন।
পায়রা বন্ধ হওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম বলেছিলেন, তারা চেষ্টা করছেন। সরকারও সহযোগিতা করছে। জুনের ২৫ তারিখ থেকে পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
উৎপাদন বিবেচনায় পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার বিচারেও দেশের অন্যতম সফল বিদ্যুৎকেন্দ্র এটি। গড়ে দেশের দৈনিক মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ জোগান দেয় কেন্দ্রটি।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ব বাজারে জ্বালানির মূল্য অনেকটা বেড়ে যায়, বাংলাদেশ তখন উচ্চমূল্যের জ্বালানি আমদানি কমিয়ে দেয়। এর প্রভাবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সংকট তৈরি হয়। বিদ্যুতের এই ঘাটতি পূরণে পিডিবি তখন পায়রার সাশ্রয়ী বিদ্যুতের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিল। কারণ, এটি একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পুরো মাত্রায় এমনকি সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছিল।
সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর জ্বালানি (কয়লা) দিয়ে চলে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি করা কয়লার বিল পরিশোধ করাতে পারছিল না প্রতিষ্ঠানটি। বিশাল অঙ্কের (প্রায় ৩৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বকেয়া জমে যাওয়ায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে অনেক আগেই চিঠি দিয়েছিল সরবরাহকারী বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান।
এই কথা গত এপ্রিলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল বিসিপিসিএল; যার অনুলিপি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরকেও দেয়া হয়েছিল। বকেয়া দ্রুত পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘অন্যথায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে ব্যাপকভাবে লোডশেডিংয়ের কারণে জাতীয় অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন হবে।’ তবে সময়মতো বকেয়া পরিশোধ করে কয়লার জোগান নিশ্চিত করতে না পারায় পায়রা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
সরকার দ্রুততার সঙ্গে ডলারের জোগান নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেয়। প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ করে পুনরায় কয়লা আমদানির পথ খোলা হয়। এরপর, বৃহস্পতিবার কয়লা নিয়ে প্রথম জাহাজ বাংলাদেশে পৌঁছায়।