এক ব্যবসায়ী কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু তাহেরের বিরুদ্ধে। দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা যায়, ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল মোড়ে মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজের বাউন্ডারি ঘেঁষে আহসান বারী রুমির মালিকানাধীন ২৫ শতাংশ জায়গা ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কিনে নেন ইউনিক বিল্ডিং ডেভেলপারের এমডি মাহবুবুর রহমান মনি ও আবু আব্দুল্লাহ মো. ফজিল তারা। এই জমিতে পেট্রলপাম্প ছিল। জায়গাটি বেচাবিক্রির সময় মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন আবু তাহের। ওই সময় জায়গাটি অধিগ্রহণ করতে সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তখন জায়গাটি অধিগ্রহণে অসম্মতি জানানো হয়। পরে আবাসন ব্যবসায়ীরা কিনে নেন।
এদিকে জায়গাটিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করলে কলেজের সমস্যা হতে পারে, সেই লক্ষ্যে সিটি করপোরেশনকে নকশার অনুমোদন দিতে নিরুৎসাহিত করেন আবু তাহের। ব্যবসায়ীরা ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ২০ তলা অনুমোদনের জন্য আবেদন করলে সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটু অধ্যক্ষের সঙ্গে বিষয়টি সুরাহা করতে বলেন। পরে ব্যবসায়ীরা নকশার অনুমোদনে বিরোধিতা না করার জন্য অধ্যক্ষকে কয়েক কিস্তিতে ৪০ লাখ টাকা এবং চেকের মাধ্যমে ১০ লাখসহ মোট ৫০ লাখ টাকা দেন। মোটা অংকের টাকা দিয়ে ৩১ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ময়মনসিংহের চেয়ারম্যান পদ বাগান তাহের।
তবে অধ্যক্ষ আবু তাহের এবং ইউনিক বিল্ডিং ডেভেলপারের এমডি মাহবুবুর রহমান মনির ভিডিও কথোপকথনে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন, ‘আমাকে আগে সম্পূর্ণভাবে ক্লিয়ার করলে নকশা অনুমোদনের জন্য মেয়রকে বলে দেব। মেয়রের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। অন্যথায় কোনো কিছুই করব না। আপনারা পারলে অনুমোদন নিয়ে নেন।’ এ সময় অধ্যক্ষ আবু তাহেরকে টাকাটা কিস্তিতে নিতে অনুরোধ জানান ইউনিক বিল্ডিং ডেভেলপারের এমডি মাহবুবুর রহমান মনি। তবে তাতে রাজি হচ্ছিলেন না চেয়ারম্যান।
অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাতে অধ্যক্ষের কক্ষে আবু তাদেরকে ৬ লাখ টাকা ও ৪ লাখ টাকার চেক দেওয়ার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ী মনির। তবে পুরো টাকা না নেওয়ায় রাগান্বিত হন আবু তাহের।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবু আব্দুল্লাহ মো. ফজিল তারা বলেন, ‘কলেজে সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহেরকে ম্যানেজ করতে ৪০ লাখ ও ১০ লাখ টাকার একটা চেক দেন মনির। মনির সম্পূর্ণ টাকা ক্লিয়ার না করায় বারবার আমাকেও তাগাদা করছিলেন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। পরে স্যারকে সম্পূর্ণ টাকা দেওয়ার জন্য আমিও বলি। কিন্তু টাকা দেওয়ার পরেও নকশা অনুমোদন হয়নি। এর মধ্যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে থমকে যায় সবকিছু। ১১৯ জনের ক্রয় করা জায়গায় এখনো কাজ শুরু করতে পারিনি। যার জন্য আমাদের এত বড় ক্ষতি হলো। তিনি (আবু তাহের) টাকাটা ফেরত দিচ্ছে না।’
ইউনিক বিল্ডিং ডেভেলপারের এমডি মাহবুবুর রহমান মনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘জমিটি কেনার আলোচনা শুরু থেকে অধ্যক্ষ আবু তাহের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের ভয়ভীতিসহ মেয়রকে জড়িয়ে প্রভাব খাটিয়েছেন। নকশার অনুমোদন যখন হচ্ছিল না, তখন স্যারের সাথে আপসে যেতে বাধ্য হই। টাকা নিয়েও একজন ক্যাডার কর্মকর্তা আমাদের সাথে বেইমানি করতে পারেন, তাই মুহূর্তগুলো ভিডিও করে রাখার চেষ্টা করেছি।’
৫০ লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করেন অধ্যক্ষ আবু তাহের। পরে মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও দেখালে তিনি চেক নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তারা যে কাজটি করেছে, তা ঠিক করেনি। তিনি বলেন, ‘আমি যখন জমিটি কলেজের নামে অধিগ্রহণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করি, সেখান থেকে অনুমোদন না এলে সরে দাঁড়াই। আমি কেন মেয়রকে নকশা অনুমোদনে বাধা দেব, প্রশ্নই ওঠে না।’