রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার অবস্থিত ৬৫ বছরের পুরোনো মগবাজার গার্লস হাইস্কুলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মায়ের নামে স্কুলটির নামকরণ করা হয়েছে। স্কুলটির নতুন নাম গাজী সামসুন নেসা গার্লস হাইস্কুল। স্কুলটির পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি পাটমন্ত্রীর ছেলে গাজী গোলাম আসরিয়া। তিনি গাজী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। গত সোমবার স্কুলটির নাম পরিবর্তনের আদেশ জারি করেছে ঢাকা বোর্ড।
গত ১৩ মার্চ স্কুলটির নাম পরিবর্তনে সম্মতি জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়, মগবাজার গার্লস উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গাজী সামসুন নেসা গার্লস হাই স্কুল নামকরণের মন্ত্রণালয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আদেশটি পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বোর্ড থেকে স্কুলটির নতুন নামকরণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিলো মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে।
মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়ার পর ঢাকা বোর্ড থেকে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তনের চূড়ান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি রমনা থানার সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় অবস্থিত। বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ক্যাম্পাসে পাশেই স্কুলটি। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত। স্কুলের শিক্ষকসংখ্যা ১৬। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন এমপিওভুক্ত। আর ছাত্রীসংখ্যা প্রায় তিনশ।
স্কুল সূত্র জানায়, ২০১৩ থেকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য এবং বর্তমান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)। স্কুলের নাম পরিবর্তনের আলোচনা তখনই শুরু হয়েছিলো। পরে পরিচালনা কমিটিতে কিছুদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ঢাকার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বেনজীর আহম্মেদ। তারপর সভাপতি হন জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি এস এম সাইফুজ্জামান। তিনি ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এরপর থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন গাজী গোলাম আসরিয়া।
স্কুল-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত ডিসেম্বরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোবারেকা খালেদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নতুন নামকরণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। গত ১৩ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে ‘গাজী সামসুন নেসা গার্লস হাইস্কুল’ করতে সম্মতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
যদিও স্কুলের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি এস এম সাইফুজ্জামানের অভিযোগ, ইস্পাহানি গ্রুপের দানে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন এই স্কুলের নাম কায়দা করে পরিবর্তন করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোবারেকা খালেদ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির যাতে উন্নয়ন হয়, সে জন্য তারা সবাই মিলেই নতুন এই নাম চেয়েছেন। স্কুলটির নামে মগবাজার থাকলেও অবস্থান মগবাজারে ছিলো না। তাই নাম পরিবর্তনে বিভ্রান্তি কমবে বলে মনে করছেন তিনি।
আর ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়মকানুন মেনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়েই স্কুলটির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
জানা গেছে, মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন নামকরণের ক্ষেত্রে আগ্রহী ব্যক্তিকে স্কুলের তহবিলে ৩০ লাখ টাকা জমা দিতে হয়। তবে এ জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আশপাশের এলাকার মানুষের মতামত নিতে হয়। এসব করে নাম বদলের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন দিতে হয়। তারপর আনুষঙ্গিক কাজগুলো করা হয়।