দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনতে শিক্ষকদের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন।
তিনি বলেন, বিএনপি ও যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া জবাব দিতে হবে। এ লক্ষ্যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোটারদের ভোট কেন্দ্র আনতে শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে হবে। আর তরুণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্র আনতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাহলে যুক্তরাষ্ট্রসহ যারা এ দেশের নির্বাচন নিয়ে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে, তাদের কঠোর জবাব দেওয়া যাবে।
শনিবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অপরাজনীতির প্রতিবাদে’ শিক্ষকদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, আজকের যে দলটি আন্দোলন করছে, তাদের জন্ম হয়েছে ক্যান্টনমেন্টে। তাদের আদর্শে রয়েছে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস আর স্বাধীনতার বিরোধিতা। অন্যদিকে বাংলাদেশ চলছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনার ভিত্তিতে। সেই চেতনার বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক করলে তাদের পতন অনস্বীকার্য। তারা রাজনৈতিক ময়দান থেকে বিলীন হয়ে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক।
যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করে মশিউর বলেন, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা যাদের অন্যতম উদ্দেশ্য, তারাই আমাদের ছবক দিতে আসছেন। গাজায় শিশুহত্যা হচ্ছে, সেখানে আপনাদের বিবেক কোথায়? এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যেন স্বাধীন হতে না পারে, সেজন্য সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। এবারও দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে বিএনপি-জামায়াতকে মাঠে নামিয়েছেন তারা।
‘এডুকেশন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষসহ সিনিয়র শিক্ষকরা এতে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, শিক্ষক নেতারা বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও এতে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপিসহ বিরোধী দলের ডাকা হরতাল-অবরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে সক্রিয় রাখা যায় শুরুতে এ নিয়ে আলোচনা হয়। একপর্যায়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দেশের রাজনীতি, বিএনপি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দেশের স্বাধীনতাবিরোধীরা আবার হত্যা, সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করেছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আগামী জানুয়ারিতে আবার বিজয় উৎসব হবে। সেই নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোটারদের ভোট কেন্দ্র নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে তরুণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য শিক্ষকরা মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিইউপি) উপ-উপাচার্য খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন বলেন, আগামী নির্বাচনে যদি ভোট কেন্দ্র ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার টানা যায়, তাহলে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অপরাজনীতির জবাব দেওয়া হবে। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনতে শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। সমাজে কখনও রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে শিক্ষকদের বেশি সম্মান করে। এ জায়গা থেকে আমরা ভোটারদের কাছে যেতে হবে।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অলোক কুমার পাল বলেন, করোনাপরবর্তী অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেশনজট কমতে শুরু করছে ঠিক তখনই দেশে আবার হত্যা, আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত। শিক্ষা কার্যক্রম যেকোনো মূল্যে চালু রাখতে এদের রুখে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতার, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আলিমুজ্জামান, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক এ কিউ এম মাহবুব, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।