‘২০ মিনিটের মধ্যে টেন্ডার তুলে নিবি, শহরে মস্তানি করতি হলি আমাদের ট্যাক্স দিয়ে করতি হবি নাইলে তোর বাপকেও ছাড়ব না।’ ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব হোসেনের এই হুমকির একটি কল রেকর্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ১ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ওই কল রেকর্ডে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী ও বর্তমান যুবলীগ কর্মী তাজিমুল ইসলামকে হুমকি দিতে শোনা যায় ছাত্রলীগ সভাপতিকে। প্রায় আট মাস আগের একটি টেন্ডারকে কেন্দ্র করে এই হুমকির ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন হুমকি পাওয়া ব্যক্তি। তবে কোন দপ্তরের টেন্ডার ছিল, সেই তথ্য প্রকাশ করেননি তিনি।
এদিকে ওই অডিওটি এডিট করা বলে দাবি করে হুমকি পাওয়া তাজিমুলকে নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব হোসেন। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে কিছু পদবঞ্চিত মানুষ এই অপপ্রচার চালাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সজীব হোসেনের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা শরিফ আহমেদ, আবু রায়হান কাজল, রমজান আলীসহ বেশ কিছু নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া সজীব হোসেন ও তাজিমুল ইসলামের কথোপকথন-
সজীব: এই..., কাল সন্ধ্যায় তুই শিডিউল দপ্তরে গিছিস কেন?
তাজিমুল: আপনি আমাকে দোষ দিচ্ছেন কেন? শৈলকুপার শিডিউল আমার কাছে ছিল, আমি ফেলিনি, সদরের শিডিউল কে ফেল্লো সেটা তো আমি জানি না, আমাকে কেন দোষ দিচ্ছেন?
সজীব: তুই নিজে শিডিউল ফেলিছিস। এই..., আমি কি মিছে কথা কচ্ছি। তুই তো আগেই শিডিউল ফেলিছিস। তোর বাপ ফেল্লো কেন ডিসি অফিসে গিয়ে?
তাজিমুল: আমার বাপ ফেলবে কি জন্যি, তার তো দায়িত্ব না।
সজীব: তুই কোথায়? এসে শিডিউল দ্রুত তুলে নে, তাইলে কিছু বলব নানে। ২০ মিনিট টাইম দিলাম। এর মধ্যে এসে শিডিউল তুলে নে। তোর বাপের সেফ করে দিচ্ছি। এসে বাপের নিয়ে চলে যা।
তাজিমুল: আমার বাপের দোষ না, বাপের ই করবেন কেন আপনি?
সজীব: তোর বাপের...চামড়া কেটে নিবানে কলাম। তুই...গ্রামে গিয়ে...। ঝিনাইদহ শহরে মস্তানি করতি হলি আমাদের ট্যাক্স দিয়ে করতি হবি। এই জায়গা কিছু বলতি হলি আমাদের ট্যাক্স দিতে হবে।
তাজিমুল: আমি কি মস্তান? আপনার কি মনে হয়, আমি মস্তান?
সজীব: এই..., তাইলে তুই শিডিউল ফেলিছিস কী জন্যি?
তাজিমুল: আমি ফেললি তো আপনাকে বলেই দিতাম।
সজীব: ২০ মিনিট সময় দিলাম, এর মধ্যে শিডিউল তুলে নে, না হলে তোর বাপকে ছাড়ব নানে।
এই অডিওর বিষয়ে এর আগে বুধবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব হোসেন মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছেলেটা আমার ভাগনে, ছাত্রলীগ করে, আমার কর্মী। তাকে শাসন করেছি।’
তবে গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সজীব হোসেন বলেন, ‘আমাকে জড়িয়ে যে অডিও রেকর্ড প্রচার করা হচ্ছে, সেটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এটা এডিট করে প্রচার করা হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। তবে জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির কিছু পদবঞ্চিত মানুষ আছে, যারা হয়তো ষড়যন্ত্র করে আমার নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং সঠিক ঘটনা প্রকাশের অনুরোধ করছি সংবাদকর্মীদের।’
হুমকি পাওয়া তাজিমুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ‘সজীবের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। কীভাবে এই কল রেকর্ড আসলো আর কীভাবে তা ভাইরাল হলো, এটা আমার বোধগম্য না। কেউ এডিট করে এই অপপ্রচার করেছে। আমাদের বাড়ি সদর উপজেলার কনেজপুর গ্রামে। বাবা কুতুব উদ্দিন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডে নৈশপ্রহরীর চাকরি করেন। আমার লেখাপড়া শেষ, ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়েছি। এখন ব্যবসা-বাণিজ্য ও ঠিকাদারি করি।’
তবে বুধবার রাতে তাজিমুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওইদিন কী দিয়ে কী হয়েছিল তা আমিও বুঝতে পারছি না। আধুনিক যুগ, কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো। এই দেখলেন, দুটো কথা বলে ফেঁসে গেছি আমি নিজেই। যেটা হয়েছে সেটা পাস্ট ইজ পাস্ট। ওটি কত টাকার টেন্ডার ছিল সেটা মনে নেই, তবে কাজটা হতে পারে খাল কাটা বা রিপেয়ারিং হবে হয়তো। সজীব আর আমার ভিতরে কী কথা হয়েছে, সেটা আমরাই জানি।’
বিষয়টি নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রানা হামিদ বলেন, একজন ছাত্রলীগ সভাপতির এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করা উচিত হয়নি।