দৈনিক শিক্ষাডটকম, জাবি : ল্যাবএইড হাসপাতালে এন্ডোস্কোপি করাতে গিয়ে ‘ভুল চিকিৎসায়’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক শিক্ষার্থী রাহিব রেজার (৩১) মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত চিকিৎসক ডা. মাহতাব স্বপ্নীলের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ সময় হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. মাহতাব স্বপ্নীল ও ল্যাবএইডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
রাহিব রেজা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের (৪২তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি রাজধানীর স্টার্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানে প্রোডাক্ট ম্যানেজার ও আইটি কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মানববন্ধনে মৃত রাহিব রেজার স্ত্রী তাসমিয়া আফরোজ বলেন, ‘ল্যাবএইডের ভুল চিকিৎসায় আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি যাতে শুধুমাত্র ল্যাবএইডের বক্তব্য প্রাধান্য না দিয়ে রাহিবের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের কাছ থেকে তথ্য নেয়। আমরা চাই, সুষ্ঠুভাবে যেন তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আমরা ল্যাবএইড এবং ডা. স্বপ্নীলের লাইসেন্স বাতিল চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এস এম সাদাত হোসেন বলেন, ‘ল্যাবএইড এবং ড. স্বপ্নীলের অদক্ষতায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটভাই মারা গেছে। আমরা মনে করি, এটা একটি হত্যাকা-। আশা করি, এই ঘটনায় যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তারা সুষ্ঠুভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।’
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘রাহিবের মৃত্যুর কারণ খুঁজে দেখা দরকার। ভালো চিকিৎসার জন্য আমরা প্রাইভেট হাসপাতালে যাই। তারপরেও কেন আমরা অরাজকতার স্বীকার হবো? তার মধ্যে ভালো হাসপাতালগুলোতে কেন অরাজকতা হচ্ছে? এটার যদি বিচার না হয় তাহলে এটি চলতেই থাকবে।’
মৃত রাহিব রেজার বোন নিভিন রেজা বলেন, ‘রাহিবের স্লিপ অ্যাপনিয়া ছিল, তাই যেকোনো ধরনের অ্যানেস্থেসিয়া তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং একইসাথে লাইসেন্সকৃত এনেস্থেটিস্ট ছাড়া অ্যানেস্থেসিয়া অ্যাডমিনিস্টার করা সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ডাক্তার তাকে এনেস্থেশিয়া দিয়েছে। এ ঘটনার আগে ও পরে ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তার আমাদের কাছে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে।’
এর আগে, পেটে গ্যাসজনিত সমস্যার কারণে রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাবের (স্বপ্নীল) কাছে যান রাহিব রেজা। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ল্যাবএইডে এন্ডোস্কোপি করানোর পরামর্শ দেন ডা. স্বপ্নীল। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। পরে ১৯ ফেব্রুয়ারি ল্যাবএইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাহিব রেজার মৃত্যু হয়।