নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ও জাতীয় সংসদে দেয়া শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন শিক্ষাক্রম সংস্কারের দাবিতে রাজপথে নামা ও প্রচার এবং কতিপয় গণমাধ্যমে সোচ্চার কিছু অভিভাবক। তাদের ভাষায়, মন্ত্রীর সাম্প্রতিকে সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে শিক্ষাক্রম সংস্কারের দাবি জানানো শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগীদের হেয় করা হয়েছে। তারা দাবি করছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের পাশাপাশি অংশীজনদের মূল্যায়ন পক্ষপাতিত্ব বাড়াবে। ওই অভিভাবকদের দাবি, শিক্ষকদের হাতে মূল্যায়নের নম্বর থাকলে নতুন শিক্ষাক্রমে নিরপেক্ষ মূল্যায়ন সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার রাতে দৈনিক শিক্ষাডটকমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে এ মন্তব্য করেন নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামা অভিভাবকদের সংগঠন ‘শিক্ষা আন্দোলন সম্মিলিত অভিভাবক ফোরাম’।
মুখপাত্র আমিরুল ইসলামের সই করা ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে সারাদেশে আন্দোলন চলছে। এ নিয়ে নানা ধরণের আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। এরই মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বক্তব্যে আন্দোলনকারী শিক্ষক, অভিভাবকসহ শিক্ষাঅনুরাগীদের হেয় করা হয়েছে। মন্ত্রী বর্তমান শিক্ষার পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে নতুন কারিকুলামের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী তার বক্তব্যে লিখিত পরীক্ষার পরিবর্তে মূল্যায়নের কথা বলেছেন। নতুন মূল্যায়নে শিক্ষকসহ অংশীজনদের থাকার কথা। এই অংশীজন কারা হবেন সেটা যেমন স্পষ্ট নয় অন্য দিকে অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমরা জানি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি বা গভনিং বডি কতটা প্রভাব বিস্তার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। নির্দ্বিধায় বলা হয় মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অংশীজনের অংশগ্রহণ স্বজনপ্রীতি, পক্ষপাতিত্ব, পছন্দ-অপছন্দ বাড়াবে। এছাড়া অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি, শিক্ষকদের হাতে এক তরফা মুল্যায়নের নম্বর থাকলে নিরপেক্ষ মূল্যায়ন হওয়া সম্ভব নয়।
আরো পড়ুন : নতুন শিক্ষাক্রম সংশোধন দাবিতে রাজধানীর কিছু অভিভাবক রাজপথে
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ছেলেমেয়েরা এখন শুধু বই থেকে নয়, বাইরে থেকেও শিখবে বলে শিক্ষামন্ত্রী বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ইন্টারনেট বা গুগলের ব্যবহার কতোটা উপযোগী-উপকারী। করোনাকালে এবং তার পরবর্তী সময় শিশু কিশোররা যে পরিমাণ মোবাইলে আসক্ত হয়েছে এবং তাদের আচরণেও যেসব পরিবর্তন এসেছে তা নিয়ে আমরা অভিভাবকরা তো বটেই শিক্ষক, শিশু বিশেষজ্ঞরাও উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে ব্যানবেইসের তথ্যমতে করোনাকালে গ্রামের ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের বাহিরে ছিলো। আর দ্রব্যমূল্যের এই ভয়ানক ঊর্ধ্বগতির সময়ে গ্রাম শহরের অভিভাবকরা কিভাবে ডিভাইস, ইন্টারনেট এবং ব্যবহারিক ক্লাসের উপকরণের খরচ বহন করবেন?
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, শিক্ষামন্ত্রী তার বক্তব্যে বিভাগ না থাকার বিষয়ে অন্যান্য দেশের উদাহরণ টেনেছেন। আমরা বলতে চাই বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত কতোটা উপযোগী হবে এবং বিষয়টা বাস্তবায়নের নাম শহরের সর্বস্তরে সেটার জন্য যে আয়োজন এবং শিক্ষক প্রয়োজন তা প্রস্তুত কি? আমরা আরো দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, একজন শিক্ষার্থী বিভাগ বিভাজনের মধ্য দিয়ে যতখানি বিজ্ঞান শিক্ষার আওতায় আসতো বা আসতে পারতো তার সেই সুযোগ টুকুও আর থাকলো না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন, সেখানে এই কারিকুলাম দিয়ে কি করে সম্ভব এটা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রশ্ন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, শিক্ষামন্ত্রী তার বক্তব্যে শিক্ষাক্রম বাতিলের আন্দোলনকে টাকা নিয়ে অভিভাবকরা আন্দোলন করছেন এবং কোচিং-গাইড ব্যবসায়ীদের ইন্ধন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার পরিবেশ এবং সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। নতুন কারিকুলামের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি বাইরের কার্যক্রম এবং অভিভাবকদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন বা পড়বেন। মাননীয় মন্ত্রী সবাইকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন বলেও দাবি করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
অভিভাবকরা বলছেন, পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দিয়ে ইউনিক কোড ব্যবহারের কথা বলছেন মন্ত্রী। আমরা মনে করি এটা শিক্ষার মানকে আরো নিচে নামিয়ে দেবে। তিনি আরো বলেছেন, ব্রিটিশ কারিকুলাম ভালো না। তাহলে ইংলিশ মিডিয়ামে কোন কারিকুলাম পড়ানো হয়। উচ্চতর গণিত ও জ্যামিতি তুলে দিয়ে কোন দেশের কারিকুলাম বাস্তবায়ন করছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা শিক্ষামন্ত্রীর এসব বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। শিক্ষামন্ত্রী পারতেন আমাদের বক্তব্যের যৌক্তিকতা বিচার করে তার মতামত দিতে। কিন্তু তিনি তা না করে আন্দোলন সম্পর্কে যে মন্তব্য করলেন, তা অগণতান্ত্রিক আচরণেরই পরিচায়ক। আমরা অবিলম্বে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি এবং সেইসঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় বর্তমান শিক্ষাক্রম বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।