সাজানো নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া ছমির উদ্দিন পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে মোসলেম উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই মোসলেম উদ্দিন হলেন উপজেলার পোড়াবাড়ী এলাকার কে নাগবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। গতকাল শনিবার সকালে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, ছমির উদ্দিন পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে সাতজন প্রার্থী থাকলেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন চারজন। নিয়োগ পরীক্ষার আগেই ২৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই মোসলেম উদ্দিনকে চূড়ান্ত করা হয়। তার সঙ্গে যে তিনজন আজকে পরীক্ষা দিয়েছেন তারা ছিলেন মোসলেম উদ্দিনের সহযোগী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছমির উদ্দিন পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, এই স্কুলের সহকারী শিক্ষক শাকের আহমেদ এই পদের প্রার্থী ছিলেন। ভাবনদত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলতাফ হোসেন নামে আরেকজন প্রার্থীও ছিলেন। কিন্তু তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। প্রহসনের পরীক্ষা হওয়ার কারণেই তারা অংশগ্রহণ করেননি বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তার।
এ বিষয়ে জানতে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জামাল হোসেনকে ফোনে চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার সফিকুল ইসলামকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, নির্বাচনের আগে গত ২৯ ডিসেম্বর এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ইউএনও পরীক্ষা স্থগিত করেন।
জানা গেছে, সহকারী প্রধান শিক্ষক শাকের আহমেদ প্রার্থী হওয়ায় সিনিয়র শিক্ষক জামাল হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়। শাকের আহমেদ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকাকালে তিনি এবং স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম গত ১৮ সেপ্টেম্বর কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগ বাণিজ্য নিশ্চিত করতে ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি অচেনা ও অখ্যাত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেন। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি কয়েকটি বহুল প্রচারিত ও পাঠকপ্রিয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলে আবারো আশ্রয় চালাকির আশ্রয় নেন শাকের আহমদ। নিয়োগ প্রক্রিয়ার একটা বড় ধাপ হলো পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ । গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি ঘুপচি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করলেও সেই সময় তিনি তা অস্বীকার করেন।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সাবিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ৩০ সেপ্টেম্বর আমি সভাপতিকে একজন প্রার্থীর কথা জানিয়েছিলাম। তখন তিনি আমাকে বলেন এখনো পর্যন্ত নিয়োগ বিষয়ে কোনো কিছুই করা হয়নি যখন করা হবে তখন জানানো হবে।
সাবিনা আরো বলেন, এই যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হয়েছে এটা আমি আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকরা। অভিযোগ দেয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে। শিগগিরই তদন্ত শুরু হবে।
এই নিয়োগ বিষয়ে দাতা সদস্য ও সাবেক সভাপতি এবং প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য সাদি চৌধুরী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নিয়োগের বিষয়ে রেজুলেশনের জন্য যে মিটিং ডাকা হয়েছিলো সেই মিটিংয়ে কোনো নোটিশ আমাকে দেয়া হয়নি। আমাকে অনুপস্থিত রেখেই এগুলো করা হয়েছে। এর আগেও তিনটি নিয়োগের বিষয়ে আমি জানতাম না পরে সবার কাছ থেকে জানতে পেরেছি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য হয়েও স্কুলের কোনো বিষয়েই আমাকে কিছু জানানো হয় না। এটা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। আমি চাই যোগ্যতার ভিত্তিতে এই প্রাচীন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ দেয়া হোক এবং এর মধ্য দিয়েই বিদ্যালয়ের সম্মান অক্ষুণ্ন থাকুক।