মণ্ডপের চূড়ায় শিকলবদ্ধ কলম, নিচে প্রতীকী গণমাধ্যম। উপরে লেখা ‘মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্র’। আবার মণ্ডপের মাঝে লেখা হয়েছে ‘মেধা=এমসিকিউ?’, বিদ্যা দেবীর পায়ের নিচে ধুলোয় মলিন হয়ে পড়ে আছে ধ্রপদী কিছু সাহিত্যের বই। দেবী সরস্বতীকে ঘিরে ধরেছে আছে এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) নামক লেখা ফিতা।
গতকাল বুধবার জগন্নাথ হলের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পূজা মণ্ডপের এ দৃশ্য দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশে সিনেমার ‘মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্র’ ধারনার আলোকে এবার মণ্ডপের থিম সাজানো হয়েছে। যেখানে মিডিয়াকে বলা হয়েছে ‘মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্র’।
বিভাগের শিক্ষার্থী প্রান্ত দত্ত বলেন, এটাকে আমরা আইডিয়োলজিক্যাল স্টেট অ্যাপারেটাস হিসেবে ধরেছি। একটা ক্ষমতাসীন শ্রেণি যখন সাধারণ মানুষকে শাসন করতে চায়, তখন তারা এমন কিছু টুলস বেছে নেয়, যেগুলো প্রয়োগ করে সাধারণ মানুষকে মগজধেলাই করা হয়। মিডিয়া হলো সেই ধরনের একটা টুল। আজকে সত্য-ন্যায়ের কলম শিকলবদ্ধ। মিডিয়াকে মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সরস্বতীর পায়ের নিচে কেন ধ্রুপদী সাহিত্য ধুলোয় মলিন হয়ে পড়ে আছে, এমন প্রশ্নে প্রান্ত দত্ত বলেন, আজকে মুখস্থ নির্ভর এমসিকিউভিত্তিক যে শিক্ষাব্যবস্থা, সেটাকে আমরা তুলে ধরেছি। আজকে শিক্ষার্থীরা মুখস্থনির্ভর বিসিএসের গাইড বই নিয়ে ব্যস্ত। অথচ ক্লাসিক্যাল যে সাহিত্য, তা নোংরা অবস্থায় পড়ে আছে। আমাদের প্রশ্ন মেধা কি শুধু এমসিকিউ? এআই এসে পিছিয়ে দিয়েছে সৃজনশীলতার রূপ সরস্বতীকে। এখন আমরা মানুষের সৃষ্টিশীলতাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে গুরুত্ব দিচ্ছি। সেই বিষয়টাও তুলে ধরেছি।
প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার সকাল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বাণী অর্চনা, আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলিতে সিক্ত হন ‘বীণাপাণি’।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। দেবীর একহাতে পুস্তক, আর অন্য হাতে বীণা। এজন্য তাকে ‘বীণাপাণি’ও বলা হয়। তার বাহন সাদা রাজহাঁস।
মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সাদা রাজহাঁসে চেপে দেবী ধরায় আসেন। মর্ত্যলোকে ভক্তরা অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে কল্যাণময়ী দেবীর চরণে পূজার অর্ঘ্য নিবেদন করেন।
সারা দেশে বিভিন্ন মন্দিরের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঐতিহ্যগতভাবে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয় প্রতিবছর। প্রতি বছর ঢাকায় সবচেয়ে বড় পরিসরে সরস্বতী পূজার আয়োজন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে।
বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর কৃপা-লাভের আশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ হল মাঠে আলাদা আলাদা পূজামণ্ডপ তৈরি করেন। বিভিন্ন থিমের আলোকে এবার সেখানে ৭২টি পূজার মণ্ডপ তৈরি করা হয়। অন্য বছরের মত এবারও এ হলের পুকুরে বসানোর জন্য দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা তৈরি করেছে চারুকলা অনুষদ।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।