কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে জেল-জুলুম আহতের শিকার হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা বাকি পরীক্ষায় বসতে চান না। সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ বা অটো পাসের দাবিতে আন্দোলন করছেন। ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ঘেরাও করেছেন। চেয়ারম্যান তপন কুমার অনুপস্থিত থাকায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবুল বাসার ছাত্রদের সামাল দেন। আজ মঙ্গলবার শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষাসচিব এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন এমন আশ্বাসে ঢাকা বোর্ড ছাড়েন পরীক্ষার্থীরা। এমন প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, শিক্ষা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মঙ্গলবার সকালে দৈনিক আমাদের বার্তার সঙ্গে আলাপকালে বলেন, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন দাবি রয়েছে। সব দাবি পর্যালোচনা করে যেটা ন্যায়সঙ্গত হবে, পরীক্ষার্থীদের পক্ষে যাবে সেরকম সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে। কারণ এখানে পরীক্ষার্থীদের পরবর্তীি উচ্চশিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও ভাগ্য জড়িত।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে কিছু বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সংশোধিত নতুন সময়সূচি দিয়েও পরীক্ষা নিতে পারেনি শিক্ষা বোর্ডগুলো। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর স্থগিত পরীক্ষাগুলো নিতে আবারো সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। পুনর্বিন্যাসকৃত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো শুরু হওয়ার কথা। তবে আর পরীক্ষায় বসতে চান না শিক্ষার্থীরা। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অটো পাসের দাবি তুলেছেন পরীক্ষার্থীরা। নেমেছেন আন্দোলনেও। গত ১৫ আগস্ট নতুন সময়সূচি প্রকাশের পর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবারও রাজধানীসহ সারাদেশে অটো পাসের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন পরীক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বোর্ডের সামনেও বিক্ষোভ করেছেন তারা। শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের অনেক সহপাঠী পরীক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হয়েছেন। তারা চিকিৎসাধীন। তাছাড়া বিভিন্ন থানায় রাখা প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র পুড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে তারা আর বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষায় অংশ নিতে চান না।
নতুন শিক্ষা সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিষয়টি অবগত। আমি এখানে নতুন এসেছি। শিক্ষা বোর্ড কি বলছে বা কি সমস্যা, সেটা শিক্ষা উপদেষ্টাকে অবগত করা হবে। যে সিদ্ধান্ত নেয়া হোক, তা বোর্ডে জানানো হবে। বোর্ড সেই মোতাবেক কাজ করবে।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। রুটিন অনুযায়ী ৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর আরো তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার। সূচি অনুযায়ী, এখনো ১৩ দিনের মোট ৬১টি বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বাকি রয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) বিভিন্ন বিষয় থাকায় এতগুলো পরীক্ষা আটকে গেছে। যদিও প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১৩টি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এর মধ্যে বাধ্যতামূলক বাংলা ও ইংরেজির চারটি বিষয় (প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র) এবং আইসিটি। ৮টি বিষয় ঐচ্ছিক (অপশনাল)।
২৪ থানায় এইচএসসির প্রশ্ন পুড়লেও উত্তরপত্র অক্ষত : ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন থানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে থানার মালখানায় রাখা এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র পুড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। ঠিক কতগুলো থানায় পরীক্ষার অতি গোপনীয় জিনিসপত্র পুড়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা জানাতে সব বোর্ডকে চিঠিও দয় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড কমিটি। সব বোর্ড থেকে তথ্যও জানানো হয়েছে। তাতে ২৪টি থানায় থাকা প্রশ্নপত্র পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।