অধ্যক্ষ শাহান আরার সম্পদের পাহাড় - দৈনিকশিক্ষা

অধ্যক্ষ শাহান আরার সম্পদের পাহাড়

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগমের ৪ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ সম্পদ থাকার তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মে মাসে তার অস্বাভাবিক সম্পদের অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেয় দুদকের অনুসন্ধান টিম। ওই প্রতিবেদনের পরিপেক্ষিতে গত ২৩ জুলাই এ অধ্যক্ষের সম্পদ অর্জনের উৎস জানতে চেয়ে দুদক আরেকটি নোটিশ পাঠিয়েছে। যদিও দুদকে অনুসন্ধানে পাওয়া সম্পদের বাস্তবিক মূল্য ২০ কোটি টাকারও বেশি বলে মনে করছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।

এদিকে সাবেক এ অধ্যক্ষের দুর্নীতি ও অনিয়মের অন্যতম সহযোগী একই প্রতিষ্ঠানের উপসহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান খান ও তার স্ত্রী নাহিদা আক্তার নিপা বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি অনুসন্ধান গত ৩ বছরেও শেষ করতে পারেনি দুদক। অভিযোগ রয়েছে, একটি বিশেষ মহল আতিক দম্পত্তিকে অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিতে সর্বোচ্চ প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে।

শাহান আরা বেগম বর্তমানে রাজধানীর আফতাবনগরের এভারকেয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ আছে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যক্ষের পদে থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে একটি দশতলা ভবন করে অধ্যক্ষ শাহান আরা ও তার সহযোগীরা। ওই ভবনে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এভারকেয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ওই স্কুলে অংশীদার রয়েছে আইডিয়ালের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আতিকুল ইসলামের। আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের আরেকটি টিমের কাছে।

২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘বিশেষ ক্লাসের’ নামে বাধ্যতামূলক অর্থ আদায়ের অভিযোগ পেয়ে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখায় অভিযান চালায় দুদকের একটি দল। ওই অভিযানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মেলে। ওই সময় অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত জব্দ করে দুদক। এর পর অধ্যক্ষ শাহান আরা বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক কার্যালয়ে তবল করে তাকে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় ২০২১ সালে।

অভিযোগ রয়েছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপসহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান খান অধ্যক্ষ শাহান আরার অনিয়ম-দুর্নীতির প্রধান সহকারী ছিলেন। তার বিরুদ্ধেও পৃথক একটি অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০২১ সালে অধ্যক্ষ শাহান আরাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদকের একটি টিম তার সম্পদের অনুসন্ধান করে। ওই টিমের সদস্যরা গত ৪ থেকে ৫ মাস আসে ওই অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়। প্রতিবেদন ও আয়কর নথির হিসেবে অনুযায়ী জানা যায়, অধ্যক্ষ শাহান আরার নামে বসুন্ধরায় ২.৫ কাঠার একটি প্লট, রাজধানীর সূত্রাপুরে ১৭৪০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, উত্তরার হরিরামপুরে ২.৫ কাঠার একটি প্লট এবং আফতাবনগরে ১৪৯০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে। সবমিলিয়ে এক কোটি ৭০ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য মিলেছে। অন্যদিকে, অস্থাবর প্রায় দুই কোটি টাকার তথ্য পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ২৬ লাখ টাকার এফডিআর, প্রায় ২০ লাখ টাকার ডিপিএস উল্লেখযোগ্য। এছাড়া টয়োটা মডেলের একটি গাড়ির মালিকানা রয়েছে তার নামে।

দুদক সূত্রে জানিয়েছে, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের সত্যতা পাওয়ায় চলতি বছরের মে মাসে কমিশনে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান সরকার ও উপসহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়ার সমন্বয়ে গঠিত অনুসন্ধান টিম। তাদের প্রতিবেদনের সুপারিশ আমলে নিয়ে গত ২৩ জুলাই দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে সাবেক আইডিয়াল অধ্যক্ষ বরাবর সম্পদের নোটিশ ইস্যু করা হয়। নোটিশ পাওয়ার ২১ কার্য দিবসের মধ্যে অধ্যক্ষ শাহান আরা ও তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সব সম্পদের হিসাবে চাওয়া হয়। ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে সম্পদ বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে কিংবা মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের যোগসাজশে শিক্ষার্থী ভর্তি বাবদ অনৈতিকভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অধ্যক্ষ শাহান আরার সময় সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ের এক সচিব গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। সে সময় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। এসএসসি ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ভর্তি বাণিজ্য, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী (টেস্ট পরীক্ষায়) অকৃত ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে ফরম পূরণে সুযোগ দেয়া, স্কুলের উন্নয়ন ফান্ডের অর্থ তসরুপসহ বিস্তার অভিযোগ রয়েছে। অধ্যক্ষের পদে থেকে বছরের পর বছর এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি করে তিনি বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। লটারিতে ভর্তি নির্ধারণ থাকলেও এর বাইরে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করানোর অভিযোগও তার বিরুদ্ধে।

দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, অধ্যক্ষ শাহান আরার দুর্নীতির প্রধান হাতিয়ার আইডিয়াল স্কুলের হিসাব রক্ষক ও উপসহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান খানও ভর্তি বাণিজ্য, স্কুলের উন্নয়ন ফান্ডের অর্থ তসরুপসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তারও বিপুল অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক। ডেভেলপার কোম্পানি করা, প্লট, ফ্ল্যাটের মালিক হওয়াসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন আইডিয়ালের হিসাব রক্ষক ও উপসহকারী প্রকৌশলীর পদে থেকে।

এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, যেকোন অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে কমিশন থেকে অনুমোদন দেয়ার পর অনুসন্ধান শুরু হয়। আইডিয়ালের সাবেক অধ্যক্ষের দুর্নীতির বিষয়েও দুদক আইন ও বিধি অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপসহকারী প্রকৌশলী আতিকুরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শেষ করতে পারছে না দুদক এদিকে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে আইডিয়ালের অধ্যক্ষের পদে থেকে সম্পদের মালিক হওয়া সাবেক অধ্যক্ষ শাহান আরার অন্যতম সহযোগী ওই প্রতিষ্ঠানের উপসহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমানের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শেষ করতে পারছে না দুদক। প্রথম দফায় দুদকের নিয়োগকরা অনুসন্ধান কর্মকর্তা সন্তোষজনক অনুসন্ধানে ব্যর্থ হওয়ায় কমিশন দ্বিতীয় দফায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে উপসহকারী পরিচালক মো. মাহবুবকে দায়িত্ব দেয়া হয়। অনুসন্ধান তদন্তের জন্য তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় দুদক পরিচালক শফিকুর রহমান ভূঁইয়াকে। অনুসন্ধান মনিটরিং ও তদন্ত তদারকির জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ২ এর পরিচালক মনিরুজ্জামানকে। ইতোমধ্যে অনুসন্ধানের ১ বছর সময় পার হয়ে গেছে।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ‘আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহান আরা বর্তমানে আফতাব নগরে এভারকেয়ার ইন্টার ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ওই প্রতিষ্ঠান মূলত অধ্যক্ষ শাহান আরা, আইডিয়ালের হিসাব রক্ষক ও ‘উপসহকারী প্রকৌশলী’ আতিকুর রহমান খান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এক সচিবের যৌথ বিনিয়োগে করা হয়েছে। স্কুলটির গভর্নিং বডির (স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটি) সভাপতি আতিকুর রহমান। ওই সচিবের ছেলে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে রয়েছে। 

আতিকুর রহমা ছাড়াও তার স্ত্রীর নামেও বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক। তার স্ত্রী নাহিদা আক্তার নীপা ভিশন ৭১ নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক। মূলত ওই প্রতিষ্ঠানের মূল মালিক আতিকুর রহমান হলে সেখানে স্ত্রীকে পরিচালক হিসেবে দেখানো হয়েছে। ইতোমধ্যে দুদকের অনুসন্ধানে আতিকের নামে ১৫টি ব্যাংকে ৯৭টি হিসাবে ১১০ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

আইডিয়ালের উপসহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক পরিচালক শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আইডিয়ালের উপসহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমানের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপসহকারী পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। অনুসন্ধান প্রতিবেদন এখনও আমার কাছে জমা হয়নি। প্রতিবেদন জমা হলে আমি তা যাচাই-বাচাই করে কমিশনের কাছে উপস্থাপন করবো।

অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপসহকরী পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন জানান, অনুসন্ধানে আমাদের বেশকিছু তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এরপর যাচাই-বাচাই করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের - dainik shiksha ‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক - dainik shiksha পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন - dainik shiksha প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035181045532227