রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে প্রশাসনের সনদ (সার্টিফিকেট) শাখার কার্যক্রম অনলাইন করা হয়েছে। ভাবা হয়েছিল, এতে সহজে সনদ তোলা যাবে। কিন্তু ভোগান্তি উল্টো বেড়েছে। অনলাইনে আবেদন সহজে করা গেলেও সনদ হাতে পেতে ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। তবে পরীক্ষা-নিয়ন্ত্রক ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সুপারিশ নিয়ে গেলে ভিন্ন কথা। তারা চাইলে একদিনেই সনদ পেয়ে যাবেন। এখন নিয়মমাফিক সনদ তোলার চেষ্টা বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সার্টিফিকেট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ শাখায় দিনে গড়ে ৫০টি মূল সার্টিফিকেট তৈরি করা হয়। প্রায় ৩৫টি থাকে বিভিন্ন সুপারিশের। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সনদ পেতে ৭ থেকে ১৫ দিন সময় লাগার কথা থাকলেও লাগে এক মাসের বেশি। জরুরি প্রয়োজনে পরীক্ষা-নিয়ন্ত্রকের সুপারিশ লাগে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিরক্তির মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই তারা এ দপ্তরে যান। কমপক্ষে এক মাস ঘুরতে হবে এটা জেনেই যান। বিশ^বিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট শাখা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘জুলাই মাসের ২৪ তারিখে সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেছিলাম। ১৫ দিন পর সার্টিফিকেট পাব বলে জানানো হয়। এখনো পাইনি। সার্টিফিকেট তুলতে যে বিড়ম্বনা হবে, তা আগে থেকেই জানতাম। তাই তেমন কিছু মনে হচ্ছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমার এবং হলের এক বড় ভাইয়ের মূল সার্টিফিকেটের জন্য ১ আগস্ট অনলাইনে আবেদন করি। অনলাইনে আবেদনের পর অফিসে যোগাযোগ করলাম। অফিস বলল, সার্টিফিকেট পেতে ছয়-সাত দিন সময় লাগবে। আমাকে মেইল দেওয়া হবে। এরপর কাগজপত্র নিয়ে এলেই সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু সময় পার হয়ে গেলেও মেইল পাইনি।
পরে অফিসে যোগাযোগ করলে তারা বলে এক তারিখে আবেদন করেছেন এত তাড়াতাড়ি কি হয়! কমপক্ষে দুই মাস সময় লাগবে। অনলাইনের কোনো সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না।’ মেহেদী সার্টিফিকেট পেলেও ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘সনদ শাখাটা মনে হয় নিকৃষ্ট একটা জায়গা। এখানে শিক্ষার্থীদের হয়রানির সব কৌশল অবলম্বন করা হয়। এমন আচরণ বন্ধ হওয়া উচিত।’সনদ শাখায় কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না। এ শাখার বদনাম অনেক আগে থেকেই। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে না। এর পরিবর্তন জরুরি।
সনদ শাখার একমাত্র কম্পিউটার অপারেশন সুপারভাইজার মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মানুষ সার্টিফিকেটের জন্য এখানে খেলতে আসে না। প্রয়োজনেই আসে। শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যে দুষ্টুমি করে বটে। তারপরও তারা প্রয়োজনেই আসে। সমস্যা হলো আমি এক হাতে কত কাজ করব! আমার একজনমাত্র সহকারী।’ তিনি বলেন, ‘সার্টিফিকেটের এ কক্ষে একজন সিকিউরিটি দরকার। তাহলে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ হতো এবং আমি ২০টা সার্টিফিকেটের জায়গায় ৫০-৬০টার কাজ করতে পারব। এতে শিক্ষার্থীদেরই লাভ।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিদিন ৫০টার কাছাকাছি সার্টিফিকেটের কাজ হয়। সুপারিশ থাকে ৩০-৩৫টা। এজন্যই শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট পেতে দেরি হয়।’
প্রসঙ্গত, গত বছর ২৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব করতে অনলাইনে ফি প্রদানের জন্য ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সার্টিফিকেট শাখার সব আবেদন অনলাইনে নেওয়া শুরু হয়।