পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের চৈতা নেছারিয়া সিনিয়ার মাদরাসার অধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমান বিক্রমপুরী মাসের পর মাস অনুপস্থিত থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন। তার বিরুদ্ধে ভুয়া কাগজপত্র ও স্বাক্ষর জাল করে কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। অধ্যাক্ষের পদ থেকে নিজেকে পদত্যাগ দেখিয়ে কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে তিনি ১৯ লক্ষ ৯৩ হাজার ৬০০ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন।
এ ঘটনায় জানাজানি হলে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নুর মোহাম্মদ খান ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট এবং অবসর সুবিধা বোর্ডে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
মাদরাসা সূত্রে জানা গেছে, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গত বছরের ২৮ আগস্ট থেকে মাদরাসায় অধ্যক্ষ মো. ওবায়দুর রহমান অনুপস্থিত থাকায় মাদরাসা পরিচালনা কমিটি চলতি বছরের ১ জানুয়ারি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে মো. আবদুল মালেক দায়িত্ব দেয়া হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গোপনে ভুয়া রেজুলেশন ও কাগজপত্র তৈরি করে প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেখিয়ে তার স্বাক্ষর জাল করে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১ আগস্ট নিজেকে পদত্যাগ দেখিয়ে কল্যাণ ট্রাস্ট এবং অবসর সুবিধা বোর্ডে কাগজজমা দিয়ে টাকা তোলার আবেদন করেছেন। অপরদিকে সরকারি কোষাগার থেকে তৎকালীন মাদরাসার সভাপতি এডিসির (শিক্ষা ও আইসিটি) স্বাক্ষর জাল করে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেতনের টাকাও তুলে নিয়েছেন। এছাড়া অনিয়ম করে ও চাকরি দেয়ার নামে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উল্লেখ রয়েছে।
এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মো.ওবায়দুর রহমান বিক্রমপুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবদুল মালেক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মাদরাসার অধ্যক্ষ মাসের পর মাস মাদরাসায় অনুপস্থিত থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ফলে মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম সচল করতে শিক্ষকরা ও গভর্নিংবডির সভাপতি আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সভাপতি স্বাক্ষর জাল করে বেতন উত্তোলন, মাসের-পর মাস মাদরাসায় অনুপস্থিত থাকাসহ নানা অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষকে তিনটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তবে মাদরাসার কোনো শিক্ষক এর সঙ্গে জড়িত আছেন কি-না সে বিষয়টি নিয়েও তদন্ত চলছে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. রেজাউল কবীর দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। একজন অধ্যক্ষ কিভাবে মাসের পর মাস মাদরাসায় অনুপস্থিত থাকেন এবং নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন-তা আমার বোধগম্য হয় না। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তারাই সিদ্ধান্ত দেবেন।