অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বেশ কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে না পারাটাকে প্রথম এবং বড় ধরনের ব্যর্থতা বলে অভিহিত করেছেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। একইসঙ্গে সরকার গঠনের পর হতাহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে না পারাকেও অন্যতম ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর চানখাঁরপুলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এর আগে তিনি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রেজিস্ট্যান্স উইক–এ আজ আমাদের কর্মসূচি ছিল স্ট্যান্ড উইথ দ্য ইনজুরড। এর অংশ হিসেবে আমাদের ঢাকাকেন্দ্রিক সমন্বয়কদের বিভিন্ন দলে ভাগ করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। আমি বেশ কয়েকটি হাসপাতালে গিয়েছি। অনেক দিন ধরেই আমরা আহতদের কাছে গিয়েছি, তাঁদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছি। কিন্তু আজকের দিনে এসে আহতদের যে পরিস্থিতি আমরা দেখেছি, সেটি নিদারুণ। আহতদের শরীরে বিদ্ধ বুলেটের যে ধরন, আমি মনে করি, এর তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। আহতদের দেখতে গিয়ে আমরা হত্যাকাণ্ডের স্পষ্ট নিদর্শন দেখেছি।’
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে বেশ কিছুদিন হলো উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আজ ঢাকার হাসপাতালগুলোতে আমরা যে চিত্র দেখেছি এবং দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যে খবর পেয়েছি, এত দিন আহতদের আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করতে না পারা ও তাঁদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে না পারাকে আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই।’
এই সরকারের শুরুতেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু আজকের এই দিনে দাঁড়িয়েও আমরা শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ কোনো তালিকা পাইনি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের উচিত ছিল, যত দ্রুত সম্ভব আহতদের পাশে দাঁড়ানোর দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া। কিন্তু সেটি আমরা দেখিনি। সে জন্য এই সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতি আমরা নিন্দা জানাচ্ছি।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের কারণেই আপনারা অন্তর্বর্তী সরকার হয়েছেন। তাই আপনাদের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে তাঁদের বিষয়টি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করা ও আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। আমরা আর বড় বড় গল্প শুনতে চাই না। এটা–সেটা করে ফেলব, শুনতে চাই না। আমরা দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চাই। দেখতে চাই, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দৃশ্যমান কী পদক্ষেপ নেয়। এ পর্যন্ত যেহেতু দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, সেই জায়গা থেকে তাঁদের জবাবদিহির জায়গায় আনার সময় হয়েছে।’
সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়ক পরিচয়ে কেউ কোথাও কোনো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা চাইলে বা বিশেষ কোনো সম্পর্ক তৈরি করতে চাইলে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করার আহ্বান জানান হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশেষ সুবিধা দাবি করার কোনো এজেন্সি বা লেজিটিমেসি নেই। শিক্ষার্থীদের জায়গা থেকে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই, আমাদের কিন্তু কোনো অথরিটি নেই। শিক্ষার্থীরা যে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে, আমরা যে হাসপাতালগুলোতে ছুটে যাচ্ছি, বিভিন্নভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি—এগুলো স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ। এখানে আমাদের রাজনৈতিক বা আইনগত কোনো কর্তৃত্ব নেই। এই সরকারের কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য আমরা আমাদের জায়গা থেকে কাজ করছি।’