পুরো জাতির সাথে পেনশনভোগীরাও তাকিয়ে আছে বাজেটের দিকে। বাজেটে তাদের দুঃখ মোচন হবে সে আশায়। শেষ বয়সে পেনশনের অর্থপ্রাপ্তি ছাড়া তাদের নেই কোনো আয়-রোজগার। অনেকের ধারণা চাকুরি শেষে বসে বসে অর্থ পান পেনশনভোগীরা। কেমন অর্থ পান, সে বিষয়টি অনেকেই জ্ঞাত নন। করোনা মহামারীর ধকল কাটতে না কাটতে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতিও দুমড়ে-মুচড়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি নাকাল অবস্থায় আছে ১৫ বছরের কম শতভাগ সমর্পিত পেনশনভোগীরা। মাত্র ২৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতাই তাদের একমাত্র ভরসা। তাদের অনেকেরই পেনশন প্রাপ্তির বয়স এক যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে। রোগে, বয়সের ভারে তারা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। ঔষধপত্রসহ চিকিৎসার খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। কর্মরতদের চেয়ে তাদের চিকিৎসার ব্যয় সীমাহীন বেশি। শেষ অধ্যায় মৃত্যুর আগে তাদের চিকিৎসাভাতা কমপক্ষে ১০,০০০/- টাকা নির্ধারণ করে স্বস্তিদায়ক চিকিৎসার সুযোগদানে সদাশয় সরকারের সদয় মর্জি কামনা করছি।
ইতোপূর্বে বর্তমান সরকার শতভাগ সমর্পণকারী পেনশনভোগীদের জন্য যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা এক যুগান্তকারী শুভ সূচনা। এর ফলে ১ জুলাই ২০১৭ তারিখে যাঁদের শতভাগ সমর্পিত পেনশনের বয়স ১৫ বছর তাদেরকে পুনরায় পেনশনে ফিরিয়ে এনেছেন। যারা ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে আছেন তাঁরাই আর্থিক লাভবান হয়েছেন। এদিক দিয়ে তাঁরা পরম সৌভাগ্যবান। খুব কমসংখ্যাক লোকই বেঁচে থেকে পুনরায় পেনশন পুনঃস্থাপনের সুযোগ অর্জন করেছেন।
যারা জীবনের সোনালী বসন্তগুলো দেশ ও জনগণের কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন। তাঁরা আজ স্বল্প বেতনের পেনশনের শেষ সঞ্চয় পরিবারের কল্যাণে নিঃশেষ করে দিয়েছেন। এর ফলে তাঁরা পরিবার, আত্মীয়স্বজন সকলে কাছের জঞ্জালের মতো মনে হয়। অনেকটা যে গাভী দুধ দেয় না, শুধু বসে বসে খায়, তাদের মতো শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীরা। তাঁরা যে টাকা এককালীন উত্তোলন করেছেন, তাঁদের টাকা পেনশনভোগীদের যারা মাসে মাসে পেনশন পেয়ে থাকেন, তাদের ৮ বছর ৪ মাসের সমান। এ প্রসঙ্গে একটা হিসাব উপস্থান করছি -
ধরা যাক কোনো ব্যক্তি ১৫,০০০ টাকা বেতনে অবসর গ্রহণ করেছেন। ৫০ শতাংশ পেনশন করার পর প্রতি মাসে ৬০০০ টাকা পান। আর শতভাগ পেনশন সমর্পন করে এককালীন ৬,০০,০০০ টাকা অতিরিক্ত পেয়েছেন। এই টাকা ১০০ মাস বা ৮ বছর ৪ মাসের পেনশনের সমান। এ ক্ষেত্রে শতভাগ পেনশন সমর্পনকারীদের নিবেদন ১৫ বছরের স্থলে ১০ বছর পেনশন পুনস্থাপন করা, এ প্রত্যাশা কোন অবস্থায় অযৌক্তিক নয়। পেনশন সমর্পণকারীগণ জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও একটু আলোর মুখ দেখবেন। জীবনের শেষ বেলা স্বস্তিবোধ করবেন এ মানবিক আবেদন রইলো।
সিনিয়র পেনশন ভোগীদের বৈষম্য লিখতে গিয়ে, হাছন রাজার গানের দু’টি লাইনের কথা মনের মাঝে ভেসে এলো:
“কেউ বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে”
চাকরিরত অবস্থায় জুনিয়র কর্মচারী থেকে সিনিয়র বেতন বেশি পেয়ে থাকেন। পেনশনের ক্ষেত্রে উল্টা নিয়ম ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে। বঙ্গবন্ধু বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশে এ বৈষম্য দীর্ঘ ৫২ বছরের ধরে চলে আসছে। ভাবখানা এমন এ বিষযে কারো চেতনা বা উপলব্ধিবোধ নেই। বৃদ্ধ পেনশনভোগীরা শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক যন্ত্রণায় আহত। তাদের পক্ষে বৈষম্যের বিরুদ্ধে মহামান্য আদালতে রিট করা, মানববন্ধনসহ কার্যকর আন্দোলন করা কষ্টকর। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে যেখানে তাঁর সুযোগ্যকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা শাসনামলে প্রবীণ পেনশনভোগীরা বৈষম্যের শিকার হয়ে যন্ত্রণায় কাতর, তারা পরপারে যাওয়ার সন্ধিক্ষণে সুস্থ শারীরিক ও মানসিক স্বস্তি পেয়ে বাঁচতে চায়।
এ প্রেক্ষাপটে পেনশনভোগীদের চিকিৎসা ভাতা ন্যূনতম ৫,০০০ টাকা হতে ৭০ বছরের ১০,০০০/- টাকা, শতভাগ পেনশনসমর্পনকারীদের ১৫ বছরের স্থলে ১০ বছর পেনশন ঊর্ধ্বে জুনিয়র সিনিয়রদের বৈষম্য দূরীকরণ করে তাঁদের মাঝে শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক স্বস্তি দেয়া হোক এ বাজেটের প্রত্যাশা।
লেখক : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ