অবৈধ নিয়োগ পেয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছিলেন তিনি। অনৈতিকভাবে সরকারি কোষাগার থেকে এমপিও ভোগ করছেন ১৭ বছর। কিন্তু এখনো স্বপদে বহাল সেই শিক্ষক। শুধু তাই নয় এখন তিনি স্থান পেয়েছেন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিতে। অ্যাডহক কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি হয়েছেন তিনি। তিনি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্ম শিক্ষক জেবুন্নেছা আক্তার।
গত ১ মার্চ বালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির অনুমোদন দিয়েছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। সহকারী শিক্ষক জেবুন্নেছা আক্তারকে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে অ্যাডহক কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। অ্যাডহক কমিটির সভপতি পদে মনোনয়ন পাওয়া মাসুদুজ্জামান রতনের বিরুদ্ধে আগে শিক্ষকদের হয়রানি করার অভিযোগ আছে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, এ কমিটি নিয়ে অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা বোর্ড। একদিকে বোর্ড থেকে কিশোরগঞ্জের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বোর্ড থেকে পাঠানো অভিযোগ তদন্ত করতে বলা হয়েছে। অপর দিকে অভিযুক্ত কমিটিই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ওই অ্যাডহক কমিটি নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের মধ্যে।
শিক্ষকরা বলছেন, অবৈধ নিয়োগ পাওয়া জেবুন্নেসা আক্তারকে কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি করা হয়েছে। আর যাকে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি করা হয়েছে সেই মাসুদজ্জামান রতনের আগে শিক্ষকদের অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করেছেন। তাকে সভাপতি করা হচ্ছে। এ অ্যাডহক কমিটি আমরা চাই না। কমিটি গঠনের অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত করতে ৫ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। কিন্তু তদন্ত শেষ বা প্রতিবেদন পাওয়ার আগেই অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠনটির ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্যের করা অভিযোগ তদন্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর জানতে পেরেছে, সহকারী শিক্ষক জেবুন্নেসা আক্তারের নিয়োগ ও এমপিও বিধি সম্মত হয়নি। তাই তার এমপিওর জন্য নেয়া টাকা আদায় ফেরত নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে। দুবার শোকজও করা হলেও কোনো এক রহস্যময় কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে এখনো এমপিও ভোগ করছেন জেবুন্নেছা আক্তার।
জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সাবেক বিদ্যুৎসাহী সদস্য মো. শামছুল হক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর প্রথম ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি এবং পরে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলো। যার কপি দৈনিক আমাদের বার্তা ও দৈনিক শিক্ষাডটকমের হাতে এসেছে। এসব বিষয় নিয়ে গত নভেম্বরে দৈনিক আমাদের বার্তায় ‘অবৈধ নিয়োগে ১৭ বছর এমপিও ভোগ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিলো। এরপর ওই শিক্ষককে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি দৈনিক আমাদের বার্তায় ‘১৭ বছর অবৈধ এমপিওভোগী শিক্ষকই এবার কমিটিতে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মে নিয়োগ পরীক্ষা হয় এবং পরীক্ষায় প্রথম হন শাহিদা বিনতে রাজ্জাক। নিয়োগ কমিটি তাকে নিয়োগের জন্য সুপারিশও করেন। কমিটি ওই সুপারিশ বাতিল করে একই বছরের ২ অক্টোবর ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের পুনঃবিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। জেবুন্নেছা আক্তার তাতে পুনরায় আবেদনও করেন কিন্তু এনটিআরসিএর নিবন্ধনজনিত কারণে এ নিয়োগ প্রক্রিয়াও বাতিল হয়ে যায়। পাশাপাশি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মেয়াদও শেষ হয়। জেবুন্নেছা আক্তার পুরাতন কমিটির সভাপতি, ইউএনও মোস্তাক আহমেদ ও প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া রেজুলেশন, নিয়োগপত্র ও যোগদানপত্র তৈরি করে গোপনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হয়ে যান। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে এমন এমপিওভুক্তি হওয়ায় তার অবৈধ এমপিওভুক্তি বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী সেই সময়ের শিক্ষামন্ত্রী ড. এম. ওসমান ফারুক এ বিষয়টি সমাধানের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইউএনওর নির্দেশে উপজেলা শিক্ষা অফিসার তদন্ত করে তার নিয়োগে জালিয়াতির প্রমাণ পেলেও কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
শিক্ষকরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, মাসুদুজ্জামান রতন আগে দুইবার অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি দুইজন শিক্ষককে অনৈতিকভাবে বরখাস্ত করেছিলেন। শিক্ষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করলে তা তদন্ত হয়। তদন্তে শিক্ষকদের সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়টি নিয়ে ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়। তাই তারা অ্যাডহক কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
মন্তব্য জানতে বালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আর অভিযুক্ত শিক্ষক জেবুন্নেসা আক্তার ও মাসুদুজ্জামান রতনের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি। তাই তাদের মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।