দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি: কমিটি গঠন হয়নি, তদন্ত শুরুর কোনো সম্ভাবনা নেই তবু সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে কথিত ‘যৌন নিপৗড়নের’ অভিযোগে শাস্তি দাবি করা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রোববার তার শাস্তির দাবিতে একাডেমিক সব ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের একাংশ। তবে, বরাবরের মতোই নাদির জুনাইদ দাবি করছেন তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ পরিকল্পিত, সাজানো এবং অসত্য।
রোববার সকাল থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদের অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েকটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
বিভাগের ১৫ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা চাই অধ্যাপক নাদির জনায়েদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। যতোদিন পর্যন্ত এই অভিযোগরে সুষ্ঠু বিচার না হচ্ছে ততোদিন পর্যন্ত অধ্যাপক নাদির জোনায়েদকে একাডেমিক সকল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হোক। তার বিরুদ্ধে কথা বললে পরীক্ষার খাতায় নাম্বার কম পাবে শিক্ষার্থীরা এই ভয়ে আমরা আর থাকতে চাচ্ছি না। আমরা চেয়ারম্যান স্যার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি ।
বিভাগের ১৪ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। তদন্তের মুলা ঝুলিয়ে আসলে আমাদের আন্দোলন থেকে সরানো সম্ভাব হবে না।
আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী কার্যালয়ে প্রবেশ উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে। তবে উপাচার্য তাদের দাবি এড়িয়ে গিয়েছেন বলে জানান তারা।
উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফিস খান বলেন, আমাদের দাবি ছিলো অভিযুক্ত অধ্যাপককে একাডেমি সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি না দিলে আমরা ক্লাসে ফিরবো না। কিন্তু উপাচার্য আমাদের এই দাবিতে সাড়া দেননি। তিনি আমাদেরকে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বছেছেন। যেহেতু অভিযুক্ত শিক্ষককে এখনই অভ্যাহতি দেয়া হচ্ছে না। তাই সিন্ডিকেট সভা পর্যন্ত আমাদের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সব একাডেমিক কর্মসূচি বর্জন চলবে। আগামীকালও আন্দোলন করা হবে বলে জানান তিনি।
বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি জানান। এগুলো হলো-অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে আনা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে; যৌন নিপীড়ককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনতে হবে; তদন্ত চলাকালে বা অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিরত রাখতে হবে।
এদিনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৩তম, ১৪তম, ১৫তম, ১৬তম ও ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক নাদির নাদির জুনাইদকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পরে তার নিজের কক্ষের দরজায় ‘যৌন নিপীড়ক অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত’ সংবলিত একটি পোস্টার ঝুলিয়ে দেন।
উল্লেখ্য, এর আগে অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কম নম্বর দেয়ার অভিযোগ তুলে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একটি ব্যাচের ২৮ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরীক্ষার ফল খারাপ করিয়ে দিয়েছেন এই শিক্ষক।
এরপর একই বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থী অভিযোগ তোলেন, তার মাস্টার্সের ভাইভায় অধ্যাপক নাদির জুনাইদ ‘কুকুরের ৫টি জাতের নাম’ জানতে চেয়েছিলেন।