দেশের ৩৫ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট দূর করতে আগামী সপ্তাহ থেকে নতুন শিক্ষক নিয়োগের কর্মযজ্ঞ শুরু করছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। পঞ্চম ধাপের এ বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ চক্রে অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষক নিয়োগ পেতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি পদে শিক্ষক নিয়োগের প্রার্থী বাছাই ও নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্ব থাকা এনটিআরসিএর কর্তারা বলছেন, আগামী সপ্তাহে শুরু হবে এ নিয়োগের জন্য শূন্য পদে তথ্য দিতে নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ই-রেজিস্ট্রেশন ও ইতোমধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য হালনাগাদ কার্যক্রম। ৩০, ৩১ জানুয়ারি বা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে আশা তাদের।
তবে এ নিয়োগের পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি কবে জারি হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কোনো মন্তব্য করছেন না কর্মকর্তারা। তাদের আশা, বছরের মাঝামাঝি বা জুন মাসের আগেই গণবিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে। তবে তার আগে ই-রেজিস্ট্রেশন, শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই কার্যক্রম সফলভাবে শেষ করতে হবে।
গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এনটিআরসিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কারিগরি সহয়তা দেয়া প্রতিষ্ঠান টেলিটকের সংশ্লিষ্টদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় টেলিটকের পক্ষ থেকে ই-রেজিস্ট্রেশন শুরুর প্রস্তুতি সম্পর্কে জানানো হয়।
সভা শেষে এনটিআরসিএর কর্তারা জানান, ই-রেজিস্ট্রেশন ও ই-রিকুইজেশনের সফটওয়্যার মোটামুটি প্রস্তুত করেছে টেলিটক। তবে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রকার ভেদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কিছু ভিন্নতা আছে। যেগুলোর সব সফটওয়্যারে এখনো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সে বিষয়গুলো সমাধান করতে টেলিটককে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আসছে সপ্তাহে ই-রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ৩০, ৩১ জানুয়ারি বা ১ ফেব্রুয়ারি এ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। তবে এর আগে টেলিটককে সফটওয়্যার পুরোপুরি প্রস্তুত করতে হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন নিয়োগের জন্য নতুন করে শূন্যপদের তথ্য নিতে হবে। আর বেশ কিছু নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে শূন্যপদের তথ্য দিতে ই-রেজিস্ট্রশন করতে হবে। আর অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তথ্য হালনাগাদ করবে। এরপর শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই শেষে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে শেষাংশে নতুন শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হতে পারে বলে আশা করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
তবে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি কবে জারি হবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি কর্মকর্তারা। তাদের আশা, বছরের মাঝামাঝি বা জুনের আগে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা যাবে। তবে, বাস্তবতা হলো ই-রেজিস্ট্রেশন থেকে শিক্ষক পদে প্রার্থীদের নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে এক বছরের বেশি সময় লাগে। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি জারির জন্য ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ই-রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু হয়। সে বছরের ২৬ জুন শুরু হয় শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ। সে বছরের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত শূন্যপদের তথ্য দেয়ার সুযোগ পায় এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সে বছরের ১৯ থেকে ২৪ আগস্ট শূন্যপদের তথ্য সংশোধন ও পরে ২৫ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর তা যাচাই বাছাই চলে। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ২৯ ডিসেম্বর থেকে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়। গত বছরের ১২ মার্চ সাড়ে ৩২ হাজার প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য নির্বাচন করা হয়। পরে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফরম পূরণ ও যাচাই-বাছাই শেষে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ২৭ হাজার প্রার্থীকে শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়।
২০২২ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে সর্বশেষ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। চতুর্থ ধাপে শিক্ষক নিয়োগের জন্য যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, ৬৮ হাজার পদ শূন্য। এমপিওপ্রাপ্য এসব এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ করতে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এনটিআরসিএ। কিন্তু মাত্র সাড়ে ৩২ হাজার পদে প্রার্থী নির্বাচন করা যায়। যেখান থেকে মাত্র ২৭ হাজার নতুন শিক্ষককে গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষাংশে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়। যাদের কেউ যোগ দিয়েছেন, কেউ কেউ দেননি। নতুন শিক্ষকরা সবাই যোগদান করলেও ৪১ হাজারের বেশি শিক্ষক পদ শূন্যই থাকছে। এসবের সঙ্গে যোগ হবে ২০২২ এর অক্টোবর থেকে ২০২৪ এর জানুয়ারি পর্যন্ত অবসরজনিত কারণে শূন্য হওয়া শিক্ষক পদ। এ হিসাবে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্ধলক্ষাধিক পদ এখনো শূন্য। যা ষাট হাজার বলেও মত দিচ্ছেন কেউ কেউ।
প্রসঙ্গত, শিক্ষক সংকট নিয়েই ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছিলো দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এসব প্রতিষ্ঠানে ২৭ হাজার নতুন শিক্ষক নিয়োগ হলেও সংকট পিছু ছাড়েনি। এ বছর অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে শিক্ষক সংকট নিয়েই। চলমান শিক্ষক সংকটে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে প্রধান শিক্ষকরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানাচ্ছেন।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।