অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণে তরুণদেরকে কাজ করতে হবে: প্রধান বিচারপতি - দৈনিকশিক্ষা

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণে তরুণদেরকে কাজ করতে হবে: প্রধান বিচারপতি

সাবিহা সুমি, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

সাবিহা সুমি, দৈনিক শিক্ষাডটকম : প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, বাংলাদেশে নিজস্ব আইনে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান বিচার কার্যক্রমের এখতিয়ার ও বৈধতা এবং স্বচ্ছতা ও মান প্রশ্নাতীত এবং যেকোনো বিভ্রান্তিমুক্ত। জেনোসাইড ও মানবতাবিরোধী অপরাধ তা বিশ্বের যেখানেই সংঘটিত হোক না কেনো সেটির বিচার হতেই হবে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতেই হবে। বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে ১৯৭১ এ কোন অঞ্চলে কী মাত্রায় জেনোসাইড হয়েছে সেই নির্মম সত্যটিকে বের করে আনতে হবে। 

তিনি বলেন, আমরা খুলনার চুকনগর, গল্লামারি, বটিয়াঘাটার নানা বধ্যভূমির কথা জেনেছি। আমার মনে হয় আজও আমাদের দেশের অনেক বধ্যভূমি অনাবিস্কৃত রয়ে গেছে। আমার এবং জাতির প্রত্যাশা বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও বিশিষ্টজন তাদের সক্রিয় ও সক্ষম গবেষণায় এই সত্য তুলে আনতে পারবেন। বধ্যভূমিগুলোর সংরক্ষণ ও সুরক্ষা নির্মম সত্যের প্রতীক হয়ে রইবে। আর এই সত্য জাতিকে ও নতুন প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারীদের প্রতি সদা শ্রদ্ধাবনত রাখবে। সেই সঙ্গে তারা থাকবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সদা সক্রিয় ।

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রয়াত লেখক অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে  ‘অধ্যাপক কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির  ব্ক্তব্যে এসব কথা বলেন।

‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল এবং সঞ্চালনা করেন নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি নাট্যজন আসিফ মুনীর।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সটিটিউট-এর সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টে র সভাপতি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী।

প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, যে নির্মম সত্য ট্রাইব্যুনালের বিচারের মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে এবং আসছে সেটি তরুণ প্রজন্মকে জানতে হবে যেনো তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যায়।

অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ওবায়দুল হাসান আরো বলেন, কবীর চৌধুরী আজীবন ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করে, সাম্প্রদায়িকতা ছড়ায় তারা অধ্যাপক কবির চৌধুরীকে নিয়ে গুজব ছড়াতো। তাকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে হুমকি দিতো। তারা ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রাজনীতি করে।

সমাজে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ায়। অথচ বঙ্গবন্ধু তার দল থেকে মুসলিম শব্দটি ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে বাদ দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক দল গঠন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছেন। এখন দায়িত্ব আমাদের নতুন প্রজন্মের। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মান করার জন্য তরুণদেরকে কাজ করে যেতে হবে, যোগ করেন তিনি।

ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি ট্রাইব্যুনালে ৩০টি মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং একটি মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। এই মামলাগুলোতে আনুমানিক ২০০ জন অভিযুক্ত আসামি রয়েছেন।

এই মামলাগুলোতে সাক্ষ্য দেবেন ২০০ থেকে ২৫০ জন সাক্ষী। তদন্ত সংস্থার কাছে আরো ৫০০ থেকে ৬০০ মামলা তদন্তের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। মামলাগুলোর আসামি এবং সাক্ষী সবাই বয়স এখন সত্তরের বেশি। প্রাকৃতিক নিয়মেই হয়তো আর তিন চার বছর পর এদের কাউকেই আমরা বিচারের জন্য পাবো না। অথচ ভুক্তভোগীদের বিচার পাওয়ার অধিকার তখনও অপূর্ণ থেকে যাবে।  তাই খুব দ্রুততম সময়ে বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্ত করা প্রয়োজন।

নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর মতো এত অনুবাদ বোধ হয় আমাদের দেশে কেউ করেননি। তাঁর বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক এবং ইংরেজি থেকে বাংলা গ্রন্থ ৭৫-এর কম নয়। একদিকে যেমন তিনি বাংলাদেশের সহিত্যকে অনুবাদের মাধ্যমে বিদেশে পরিচিত করিয়েছেন, অপরদিকে বিশ্বসাহিত্যকে বাঙালি পাঠকের কাছে নিয়ে এসেছেন। একই সাথে তিনি চিন্তাশীল প্রবন্ধ রচনা করে গেছেন নিরলসভাবে। বিশেষ উপলক্ষে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার অনুরোধে তিনি নিবন্ধ লিখেছেন, সারগর্ভ লিখিত বক্তৃতাও করেছেন অনেক।

শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘কবীর চৌধুরী সমাজকে দেখিয়েছেন সঠিক পথে দিশা। ব্রাত্যজনকে ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনার সুকঠিন দায়িত্ব তাঁর আজীবনের প্রত্যয় ছিল। বাংলাদেশের চার রাষ্ট্রীয় আদর্শের পরিপন্থী সংগ্রামে রড় অপশক্তির ধর্মান্ধতা। সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গি মৌলবাদ, সন্ত্রাস ও রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের ঘোর বিরোধিতা করেছেন আজীবন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও মৌলবাদ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবিতে গঠিত একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিতে শহীদজননীর পাশে থেকেছেন প্রথম থেকে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াতে ইসলামীর মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবিতে ৩২ বছর আগে শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যে অভূতপূর্ব নাগরিক আন্দোলন সূচিত হয়েছিলো এর প্রধান নেতাদের অন্যতম অধ্যাপক কবীর চৌধুরী।

 

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031118392944336