দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: করোনাভাইরাসের মহামারিকালে যে টিকাগুলোর ওপর সবচেয়ে বেশি ভরসা করা হয়েছিল, সেগুলোর অন্যতম ছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে এর আগেও কথা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রথম প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করল, তাদের তৈরি করোনার টিকায় একধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সেটা হলো, থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম। সংক্ষেপে যা টিটিএস নামে পরিচিত।
বাংলাদেশেও এই টিকা ব্যবহার করা হয়েছে করোনা প্রতিরোধে। যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়েছে, আদালতের কাছে দেওয়া অ্যাস্ট্রাজেনেকার নথিতে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টে জমা দেওয়া নথি থেকে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা গেছে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে এই টিকা তৈরি করেছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকা। তবে এই টিকা নেওয়ার পর মারা যাওয়া এবং গুরুতর অসুখে আক্রান্ত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। মূলত এসব কারণেই যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা হয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে। মামলায় রায় হলে প্রতিষ্ঠানটিকে শত শত কোটি ডলার জরিমানা গুনতে হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিটিএসের কারণে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। একই সঙ্গে রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যেতে পারে। মেলবোর্ন ভ্যাকসিন এডুকেশন সেন্টার বলছে, এই ধরনের উপসর্গ সাধারণত টিকা নেওয়ার ৪ থেকে ৪২ দিনের মধ্যে দেখা দেয়।
এমন উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর যুক্তরাজ্যে মারা যাওয়া এবং গুরুতর অসুস্থতার ঘটনাও ঘটেছে। এসব মামলায় আইনজীবীরা বলছেন, এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে কিছু পরিবারের ওপর বিভীষিকা নেমে এসেছে।
বিষয়টি সামনে এলো যেভাবে
যুক্তরাজ্যে ২০২১ সালের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথম মামলা হয়েছিল। জিমি স্কট নামের এক ব্যক্তি মামলা করেছিলেন। ওই মামলা সূত্রে জানা যায়, জিমি দুই সন্তানের বাবা। ওই বছরের এপ্রিলে তিনি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছিলেন। এরপর তাঁর রক্ত জমাটবাঁধাজনিত সমস্যা দেখা দেয় এবং ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়। এর পর থেকে তিনি আর স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরতে পারেননি। জিমিকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, তখন হাসপাতাল থেকে তাঁর স্ত্রীকে তিনবার ডাকা হয়েছিল। এ সময় জিমির স্ত্রীকে বলা হয়েছিল, তাঁর স্বামীর অবস্থা খুবই খারাপ।
জিমি স্কটের করা মামলা লড়ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করেছে, তাদের করোনার টিকার কারণে টিটিএস হতে পারে। তবে এমন ঘটার আশঙ্কা খুবই কম। জিমি স্কট ছাড়াও যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে ৫০টি মামলা হয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রক্ত জমাটবাঁধা এবং প্লাটিলেট কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আদালতে ৫১ মামলা। রায় হলে, গুনতে হবে শত শত কোটি ডলার।